-->
শিরোনাম

ইলিশের দাম চড়া, কেনার সাধ্য নেই সাধারণ মানুষের

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
ইলিশের দাম চড়া, কেনার সাধ্য নেই সাধারণ মানুষের

ভোলা : আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই চার মাস ইলিশ ধরার উপযুক্ত মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টির কারণে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ইলিশে বাজার ভরপুর হলেও দাম চড়া। তবে সাধ থাকলেও ইলিশ কেনার সাধ্য নেই সাধারণ আয়ের মানুষের। মাছের দামে ক্ষুব্ধ মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।

 

দেশে চাল-ডাল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়তি। সেই বাড়তি দামের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাঙালির প্রিয় ইলিশ মাছ। যদিও বহু আগে এটি গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তের পাত থেকে ওঠে গেছে।

 

দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনের জেলেরা বলছেন, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা না মেলায় দাম কমছে না।

 

জেলে ও আড়তদারদের দাবি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রলারে করে মাছ শিকারে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। এ জন্য ইলিশের দামও বেড়েছে। কিন্তু ট্রলারে করে নদীতে মাছ শিকারের খরচ হিসাব করে দেখা যায়, ছোট একটি ট্রলারে আগে প্রতি কেজি ইলিশ শিকারে জ্বালানি খরচ হতো ১৬ টাকার মতো। এখন সেখানে খরচ হচ্ছে ২২ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ইলিশ শিকারে ৬ টাকা ৫০ পয়সা খরচ বেড়েছে। অথচ জ্বালানি তেলের বৃদ্ধির অজুহাতে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়েছে ২০০-২৫০ টাকা।

 

এদিকে সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইলিশের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে এত দাম দিয়ে ইলিশ কেনা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়।

 

সরেজমিনে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সদর মাছ বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের (এলসি সাইজ) কেজি ৯০০-১০০০ টাকা। এক কেজির ওপরের ইলিশ দেড় হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা, আর জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি দরে। দাম শুনে ইলিশ কেনা থেকে পিছিয়ে আসেন অনেকেই। ইচ্ছা থাকলেও দামের কারণে সাধারণ মানুষ ইলিশ কিনতে পারছে না।

 

এ ছাড়া উপজেলার কাশেমগঞ্জ, দুলারহাট, শশীভূষণ বাজারসহ প্রায় সব বাজারেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

 

চরফ্যাশন বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা জাহিদুর রহমান বলেন, ছোট সাইজের ইলিশের কেজিও ১১০০ টাকা। সাধারণ আয়ের মানুষ হিসেবে ইলিশ কেনা সম্ভব নয়। নিত্যপণ্যের যে পরিমাণ দাম, ইলিশ কিনলে আর পকেটে টাকা থাকবে না। ইলিশ সাধের মাছ হলেও আমাদের কেনার সাধ্য নেই।

 

মফিজ মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, আমার বাসায় মেহমান এসেছে। ভোলার ইলিশ মাছ ভালো তাই তারা ইলিশ খেতে চাচ্ছেন। কিন্তু বাজারে এসে দেখি ইলিশের দাম অনেক বেশি।

 

হাছান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, মাছের যে দাম, তাতে আমার পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

 

এদিকে উপজেলার কুতুবগঞ্জ বাজারে ইলিশ কিনতে আসা রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলে-মেয়ের আবদার পূরণে বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত দাম হওয়ায় কিনতে পারলাম না। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের দিনমজুরদের জন্য ইলিশ না।

ইলিশের আড়তদাররা বলেন, অন্যবারের মতো এ বছর সাগরেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। নদ-নদীতও কম ধরা পড়ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রলারে করে মাছ শিকারে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। তেলের দাম বাড়ার পর অনেক জেলেই সাগরে যেতে চাচ্ছেন না। এ জন্য ইলিশের দামও বেড়েছে।

 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, চরফ্যাশনের নদনদীতে এখন জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে দামও কম হওয়ার কথা। তবে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে থাকতে পারে। এ কারণে ইলিশের দাম কমছে না বলে মনে করেন এ মৎস্য কর্মকর্তা।

 

ভোরের আকাশ/জেএস/

মন্তব্য

Beta version