চট্টগ্রাম : রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড ইকো পার্কটি প্রথমদিকে পর্যটকদের মনে জায়গা করে নিলেও বর্তমানে বেহাল দশায় রয়েছে। নানা অব্যবস্থাপনায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির আকর্ষণ। নেই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। তাছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রায় বিলুপ্তি ঘটেছে এই পার্কটিতে।
পর্যটকদের অভিযোগ, বন বিভাগের নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে পার্কটির জীর্ণ অবস্থা।
সরেজমিনে পার্ক ঘুরে দেখা যায়, আগে যেসব স্থানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আনাগোনা ছিল সেসব স্থানে এখন বখাটেদের চলাচল। নিস্তব্ধতায় পার্কে পর্যটক যেতেই ভয় পায়। মনের মাঝে ভয় কাজ করেÑ এই যেন আসছে কোনো অপহরণকারী। চারদিকে জরাজীর্ণ দশা। বছরখানেক আগে সেখানে দেশি প্রজাতির পাখির পাশাপাশি আফ্রিকার পলিক্যান, ইলেকট্রাস প্যারট, সোয়ান, রিং ন্যাক, মেকাউ ও টার্কি ছিল, ছিল আকর্ষণীয় ক্যাবল কার। কিন্তু বর্তমানে সেসব স্থানে খালি খাঁচা ছাড়া কিছুই নেই। তবে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির কিছু কচ্ছপ, কিছু দেশীয় হাঁস। এ ছাড়া কিছু কিছু স্থানে কয়েকটি পাখি ছাড়া দেখার মতো কিছুই নেই।
সহধর্মিণীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সেকান্দর হোসেন। পার্কে কেমন উপভোগ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকায় রাস্তার দুই পাশে ঘাস আছে, সেসব না দেখে কেন যে পার্কে আসলাম, এখানেও তো ঘাস ছাড়া কিছু নেই। বাড়িতে হাঁস ছিল এখানেও সেই হাঁস। ভিন্নতার মধ্যে কিছু কচ্ছপ ছাড়া আর কিছুই পেলাম না। ভেতরে সহধর্মিণীকে নিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে ভয় কাজ করছিল। নিস্তব্ধতা দেখে মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছি। ঘুরে দেখার কিছুই নেই। দুইটা টিকিট পঞ্চাশ টাকা, এই টাকা দিয়ে পার্কে না এসে ঝালমুড়ি খাওয়ায় ভালো ছিল।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম শহরে চাকরি করি। তেমন সময় হয় না পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড ইকো পার্কে আসার। কিন্তু এসেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি। এখানে উঠতি বয়সি কয়েকজন যুবক-যুবতী ছাড়া আর কেউ আসে না। ক্যাবল কারও বন্ধ বলতে গেলে, পার্কটি বন্ধের পথে।
সেকান্দরের মতো প্রতিদিন অনেক পর্যটক ক্যাবল কার বন্ধ থাকায় ফটক থেকে ফিরে যাচ্ছেন। বন বিভাগের পরিচালনাধীন প্রায় ৫০০ একর বনাঞ্চলের উপরে তৈরি করা পার্কের প্রধান আকর্ষণ ক্যাবল কার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ক্যাবল কার বন্ধ থাকায় পার্কে আসা অনেক দর্শনার্থী হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জনবল না থাকায় ক্যাবল কার চালানো যাচ্ছে না জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে পার্কের উদ্বোধন হলেও ক্যাবল কার সংযোজন হয়েছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। এই পার্কে ক্যাবল কার রয়েছে ১২টি। একেকটি ক্যাবল কারে যাত্রী উঠতে পারেন ছয়জন করে। ক্যাবল কার পরিচালনার জন্য একজন প্রকৌশলীসহ ৮ জন কর্মী ছিল। ভূমি থেকে প্রায় ১০০ ফুট ওপর দিয়ে যাতায়াত করে এই ক্যাবল কার। কারে চড়ার সময় পথে পথে ছোট হ্রদ, কয়েকটি উঁচু-নিচু পাহাড়, ধানক্ষেত আর পার্কের নানা সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। ম্যানুয়্যালি চালানো ক্যাবল কারটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ওয়ারলেস সেটে বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়।
ক্যাবল কারে চড়ে ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে পাহাড় চূড়া হয়ে আবার ফিরতে ২০ মিনিট সময় লাগে। তবে পর্যটক চাইলে পাহাড় চূড়ায় নেমে বেড়াতেও পারেন। যাওয়া-আসা মিলিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কারটি দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির। পার্কে প্রবেশ ফি জনপতি ২৫ টাকা হলেও ক্যাবল কারে চড়তে হলে জনপতি ২৫০ টাকার টিকেট কেটে উঠতে হয়। কিন্তু ক্যাবল কার ও পার্কের জীর্ণ অবস্থার কারণে পর্যটকে ভাটা পড়েছে রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি পার্কে।
পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুম কবির বলেন, প্রকল্প শেষ হওয়ার কারণে ক্যাবল কার চালানোর লোকজন নেই। তাছাড়া পর্যটক না থাকায় বন্ধ রয়েছে ক্যাবল কার। দীর্ঘদিন ধরে এসব ইভেন্ট বন্ধ আছে। কিছুদিন আগে ভারত থেকে প্রকৌশলীর একটি টিম এসেছে, আবার দুই মাস পর আসবে। তারা সবকিছু দেখে গেছেন।
তিনি বলেন, পার্কের আগের রূপ ফিরে পেতে সময় লাগবে। বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের বেতন দিতে পারিনি। এমনকি বিদ্যুৎ বিল পর্যন্ত আটকে ছিল। এখন নতুনভাবে প্রকল্প চালু হয়েছে। সব পরিশোধও করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/জেএস/
মন্তব্য