-->

শুকনো মরিচে ভাগ্যবদল, মাসে আয় দেড় লাখ টাকা

বগুড়া প্রতিনিধি
শুকনো মরিচে ভাগ্যবদল, মাসে আয় দেড় লাখ টাকা
নিজের দোকানে শুকনো মরিচ ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ চাঁন (বামে)

বগুড়া: আব্দুর রশিদ চাঁন (৭০)। বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গায়ের খেটে খাওয়া মানুষের মতোই তার নিত্যদিনের সংসার, একেবারেই সহায় সম্বলহীন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দশ শতাংশ জমিই তার একমাত্র অবলম্বন।

 

সংসার চালানোর দায়িত্বে হিমশিম খেতে হচ্ছিল প্রতিনিয়ত। অভাব অনটনের দোলাচলে মনে তার স্বপ্ন খেলে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার। সেই ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্নের পথে তার বড় বাঁধা মূলধন। অনেক কষ্টে সঞ্চয় করেন মাত্র এক হাজার টাকা। সেই টাকা নিয়েই নেমে পড়েন ভাগ্য বদলের যুদ্ধে। শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধের পথচলা।

 

৪০ বছর আগে এমনই এক জীবন ছিল শুকনো মরিচ ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ চাঁনের। সততার সাথে কেনাবেচার হাল ধরে বদলে গেছে তার দিন। হাজার টাকা নিয়ে শুরু করা সেই ব্যবসায়ে এখন তার মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা।

 

এখন শুকনো মরিচ ব্যবসায়ী চাঁন তার গ্রামের বাড়ির পাশাপাশি বগুড়া সদরেও একটি একতলা বাড়ি তৈরি করে সেখানেই সপরিবারে বসবাস করছেন। ব্যবসার শুরুতে কাঁধে ভাড় নিয়ে এলাকার হাট-বাজার ঘুরে লাল বা শুকনো মরিচ বিক্রি করতেন চাঁন। ওই সময় মাসে তার আয় হতো ১৫০০-২০০০ টাকা। তবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার আয়। একই সঙ্গে ব্যবসার পরিধিও বাড়াতে শুরু করেন চাঁন।

 

গ্রামের হাটবাজার থেকে শুকনো মরিচ কিনে বগুড়া শহরের আড়ত রাজাবাজারে বেচাকেনা করতে থাকেন নিয়মিত। এরইমধ্যে ১৯৮৬ সালেই তার ব্যবসায়ের চিত্র পাল্টে যায়। বগুড়া শহরের রাজাবাজারে মরিচের আড়তে একটি দোকান ভাড়া নেন তিনি। এরপরই জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে শুকনো মরিচ কিনতে শুরু করেন।

 

বর্তমানে উত্তরবঙ্গের নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও জয়পুরহাট ছাড়াও দক্ষিণের জেলা কুমিল্লাতেও মরিচ সরবরাহ করছেন তিনি। এখন মাসে দশ হাজার কেজি শুকনো মরিচ বিক্রি করেন। বগুড়াসহ গাইবান্ধা, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও থেকে মরিচ কেনেন চাঁন।

 

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুকনো মরিচ সংগ্রহ করেন তিনি। এখন তার মরিচের ব্যবসায়ে ছেলে মোত্তাকিন সাগর দেখাশোনা করেন।

 

চাঁনের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন

চাঁন যখন শুকনো মরিচ কেনাবেচা শুরু করেন, তখন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া গ্রামের দশ শতক জমিই ছিল তার সম্বল। ওই সময় হাট-বাজার ঘুরে মরিচের ফেরি করলেও এখন তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল। ১৯৮৬ সালের আগ পর্যন্ত মাসে তার সর্বোচ্চ আয় ছিল ৩ হাজার টাকা। বগুড়া শহরের রাজাবাজারে ব্যবসা শুরু করার পর থেকেই বাড়তে থাকে তার কেনাবেচা। মাসে এখন দশ হাজার কেজি লাল মরিচ বিক্রি হয় তার। সব খরচ বাদেও এখন আয় তার মাসে আয় দেড় লাখ টাকা। গ্রামে এখন চাঁনের সেই দশ শতক জমি নেই। জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ বিঘাতে। গ্রামের সেই পুরোনো বাড়িঘরও করেছেন নতুন করে। পনেরো বছর আগে বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকাতে নির্মাণ করেন ইটের তৈরি একতলা বাড়ি। সেই বাড়িতেই সপরিবারে বসবাস করছেন তিনি।

 

চাঁনের ছেলে মোত্তাকিন সাগর জানান, তার বাবা জীবনের শুরুতে অনেক কষ্ট করেছেন। তবুও হাল ছাড়েননি। সংগ্রাম করেই নিজের ব্যবসাকে টিকিয়ে রেখে সংসার চালিয়েছেন। এখন তাদের পরিবার সচ্ছল।

 

আব্দুর রশিদ চাঁন বলেন, শুকনো মরিচের কেনাবেচা শুরুর পর থেকেই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কাঁধে ভাড় নিয়ে বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরেছি। ওই সময় যা আয় হতো, সেখানে থেকে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতাম। ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় করতে সক্ষম হই। এখন পরিবার নিয়ে ভালো আছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিজে দায়িত্ব পালন করছি, এর থেকে বেশি চাওয়ার আমার আর কিছুই নেই। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করি নিত্যদিন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version