-->

জামালপুরে পতিত জমিতে পানিফল চাষে স্বাবলম্বী কৃষক

জামালপুর প্রতিনিধি
জামালপুরে পতিত জমিতে পানিফল চাষে স্বাবলম্বী কৃষক
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বদ্ধ জলাশয় থেকে পানিফল সংগ্রহে ব্যস্ত কৃষক। ছবিটি রোববার তোলা

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পানিফল চাষে সফলতা অর্জন করেছেন কৃষক। পতিত জমিতে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার অধিকাংশ কৃষক। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানিফলের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।

 

দেওয়ানগঞ্জ অপেক্ষাকৃত নিচু ভ‚মি হওয়ায় অল্প পানি বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে থাকে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কাক্সিক্ষত ফসল সংগ্রহ করতে পারেন না। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেও বিভিন্ন জায়গায় পানি বেধে যায়। ফলে কৃষকরা মৌসুমি ফসল উৎপাদন করে পান না সঠিক অর্থ। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের পানির নিচে ডুবে থাকা পতিত জমিতে বিকল্প ফসল হিসেবে পানিফল চাষ বেছে নিয়েছে। ফসলে অধিক লাভ হওয়ায় ইতিমধ্যেই এলাকায় পানিফল চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

 

দীর্ঘদিন থেকে এ অঞ্চলের কৃষকরা পানিফল চাষ করে আসছেন। বর্তমানে কৃষকরা পানিফল বেশি সংগ্রহ করতে পারছেন। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন উপজেলার কৃষি অফিস। কৃষকদের প্রয়োজনে সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

 

তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে পানিফল চাষ এ অঞ্চলের জনপ্রিয় চাষাবাদ হয়ে উঠেছে। পানিফল সংগ্রহের উত্তম সময় এখন। অন্যান্য জমির মতোই পতিত জমিগুলোতে সমান ফসল উৎপাদন করা যায়। ফলে চাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানিফলের চাষ। সুস্বাদু এ ফলটি বাজারজাতকরণ খুবই সহজ। জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায় এ ফলটি। অল্প খরচ করে উৎপাদন বেশি।

 

লাভজনক হওয়ায় পানিফলের চাষে ঝুঁকছে চাষিরা। দেশে প্রথম পানিফল চাষ শুরু হয় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে। অল্প সময় ও কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পানিফল চাষে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেছে চাষিরা। উপজেলায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে পানিফল চাষ শুরু করেছে।

 

স্থানীয় নাম ‘সিঙ্গারা’। অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। তা ছাড়াও নানা জায়গায় বাহারি সব নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ‘ওয়াটার চেস্টনাট’ও বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’। এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়। দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারার মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চেনেন। পানিফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। ফলে চাষিদের খরচ কম।

 

পতিত জলাশয়ে চারা রোপণ করে শুধু ভালো পরিচর্যায় এর ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমি চাষে তিন-চার হাজার টাকা খরচ হয়। আর ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে আয় হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। সুতরাং লাভ প্রায় ৭ গুণ।

 

বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ পানিফলের গাছ ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পানির নিচে মাটিতে শিকড় থাকে, পানির ওপর পাতাগুলো ভাসতে থাকে। বিভিন্ন পতিত ডোবা, খাল, পুকুরের অল্প পানিতেই পানিফল চাষ করা যায়। এ কারণে এই চাষে উৎসাহ পাচ্ছে চাষিরা।

 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ করেছে কৃষক। বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ এবং চলতি বছরে প্রায় ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা বিনিয়োগ হতে পারে এ বছর। উপজেলা কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যেকোনো পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব এই ফল। এর উৎপাদন খরচ অন্যান্য ফসলের তুলনায় তুলনামূলক কম। পানিফল চাষি সুরুজ মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ করে মণপ্রতি হাজার বারোশ’ টাকা বিক্রি করে বিঘায় ১৫ হাজার টাকা লাভ পাইছি। সামনের বছর আমার বাকি জমিতেও চাষ করব।

 

ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করে ৩০ মণ ফল পেয়েছি। এতে প্রায় ৩২ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। অল্প পুঁজি ব্যয় করে লাভ বেশি। খেতেও সুস্বাদু। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশের বিলেই চাষ হয় পানিফল।

 

কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, পানিফল চাষের খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। আশা করি, এবার প্রতি বিঘাতে ফল বিক্রি করতে পারব ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। এই ফল চাষে বর্তমানে আমাদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। অঞ্চলে বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেক হতদরিদ্র পরিবার। ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্প পুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় শতাধিক পরিবার।

 

পানিফল যেমন শরীরের জন্য বেশ উপকারী। খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, বøাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে, রক্ত আমাশা বন্ধ করে, দৈহিক বিশেষ শক্তিবর্ধক, নারীদের মাজুরতার আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারী।

 

দেওয়ানগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যেকোনো পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব এ ফসল। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। এবার বন্যার প্রবলতা কম থাকায় পানিফল চাষের আগ্রহ পাচ্ছেন এই উপজেলার চাষিরা।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version