মাসউদ রানা, দিনাজপুর: জীবিকার তাগিদে মানুষ বেছে নেন নানা পেশা। দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের মংলা বাজারের বছির উদ্দিনসহ অনেকেই পেশা হিসেবে ‘বাঁশ ফাটা’ কাজকে বেছে নিয়েছেন। এই বাঁশ ফাটানো শ্রমিকের কাজ করেই বছির উদ্দিন দিনে উপার্জন করছেন এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এই আয় দিয়ে পরিবার নির্বাহসহ তার খুব ভালোভাবে চলে যায়।
সম্প্রতি মংলা বাজারের বাঁশ হাটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ফাটিয়ে বাতা তৈরি করে বোঝা বানছেন বছির উদ্দিন। অন্যের বাঁশের আড়তে চুক্তি হিসেবে বাঁশ ফাটিয়ে বাতা তৈরির কাজ করেন তিনি। দুটি বাঁশ ফাটিয়ে হয় একটি বাতার বোঝা। বোঝাপ্রতি মজুরি পান তিনি ৭০ টাকা। দিনে ৩০ থেকে ৩২ টি বাঁশ ফাটিয়ে বাতা তৈরি করেন। তাতে বোঝা হয় ১৫ থেকে ১৬টি। এতে মজুরি আসে তার ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এই বাঁশ হাটিতে বছির উদ্দিন ছাড়াও অনেকে বাঁশ ফাটানোর কাজ করেন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই বেশি লাভের আশায় নিজেই বিভিন বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কিনে তা ফাটিয়ে বাতার বোঝা তৈরি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তদাররা দুটি বাঁশের বাতার আঁটি বিক্রি করেন ৪০০ টাকা দরে। এতে বাঁশ ফাটানোর মজুরি দিতে হয় শ্রমিককে। তাতে লাভও হয় বেশি। এছাড়া যারা নিজস্ব উদ্যোগে বাঁশ কিনে বাঁশের বাতা তৈরি করেন আড়তদাররা তাদের কাছ থেকে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বাতা কিনে নেন। হিলি সীমান্তের মংলা বাজার এলাকা পলি অঞ্চল। এই অঞ্চলে প্রায় ১৫০টি পানের বরজ রয়েছে। মূলত এই পানের বরজের ছাউনির কাজে লাগে এসব বাঁশের বাতা।
সীমান্তের ঘাসুড়িয়া গ্রামের বরজ মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমির উপর একটি পানের বরজ আছে। বরজটি আমার বাপ-দাদার আমলের। আমি বর্তমানে পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। দুই বছর পর পর বরজে ছাউনি দিতে হয়। মংলা বাঁশ হাটি থেকে আমি ছাউনির বাতা কিনে থাকি। বর্তমানে আর একটি নতুন বরজ তৈরি করবো, তাই এখানে বাঁশের বাতা কিনতে আসছি।’
বাঁশের বাতার কারিগর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভ্যানে করে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরি। সেখানে বাঁশঝাড় মালিকদের কাছ থেকে বাঁশ কিনে আনি এবং নিজেই তা ফাটিয়ে বাতার বোঝা তৈরি করি। আলাদা কাউকে মজুরি দিতে হয় না। বেশি লাভের আশায় নিজেই সব কাজ করি।’
বাঁশ ফাটা শ্রমিক বছির উদ্দিন বলেন, ‘বাঁশের ব্যবসা করতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। তাই অন্যের বাঁশের আড়তে বাঁশ ফাটার কাজ করি। বেচা-বিক্রির কানা চিন্তা নেই। সারা দিন বাঁশ ফাটিয়ে বাতার বোঝা তৈরি করে দেই, তাতে দিনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে আয় হয়। এই আয় দিয়ে খুব সুন্দরভাবে সংসার চলে আমার।’
বাজারের বাঁশের আড়তদার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই অঞ্চলে এটি বড় বাঁশের হাট। এই হাটে মানুষ বাঁশ বিক্রি করতে আসেন। আমি পাইকারি দরে বাঁশ কিনে থাকি। আমার আড়তে বছিরসহ কয়েক জন বাঁশ ফাটার শ্রমিক আছে। তারা বাঁশ ফাটিয়ে বোঝা তৈরি করে দেয়। এই এলাকায় অনেক পানের বরজ রয়েছে। মূলত পানের বরজ মালিকরা বাতা কিনে নিয়ে যান। মংলা বাঁশ হাটিতে প্রচুর বাতার চাহিদা রয়েছে।’
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য