-->
শিরোনাম
মাছ-মাংসে উত্তাপ বাড়ছেই

শীতের সবজিতে ভরপুর বাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
শীতের সবজিতে ভরপুর বাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ চলমান। শীতের বার্তা পড়েছে আরো আগে। শহরে শীতের আগমনী বার্তা তেমন অনুভব না করা গেলেও গ্রামের মানুষ ভালোভাবে এটা অনুভব করতে পারছেন। ইতোমধ্যে তারা তুলতে শুরু করেছেন শীতের শাকসবজি।

 

গ্রামের হাটবাজারগুলোয় দেখা মিলছে তরজাতা এসব সবজির। গ্রাম থেকে সহজেই এসব সবজি চলে আসছে রাজধানীর বাজারগুলোয়। ফলে রাজধানীর প্রতিটি বাজারই নতুন সবিজতে ভরপুর দেখা যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহে এসব সবজির দাম সামান্য কমলেও তা এখনো মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে রয়েছে বলে জানান ক্রেতারা। একইভাবে মাছ-মাংসের বাজারেও উত্তাপ বাড়ছেই।

 

ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গ্রাম থেকে যেসব সবজি আসছে, তা চলে যাচ্ছে আড়তদারদের কাছে। তারা আগের চেয়ে অনেক কম দরে শীতের সবজি কিনতে পারছেন। কিন্তু খুচরা বাজারে এসে দামের প্রার্থক্যটা বেশি হয়ে যাচ্ছে। খুজরা বাজারে দাম অনেক বেশি। পাইকাড়রা যে সবজি ২০ থেকে ৩০ টাকায় কিনছে, তা খুচরা বাজারে হয়ে যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মূলত সে কারণেই সবজির বাজারে স্বস্তি মিলছে না।

 

জানতে চালেই লুৎফর রহমান নামে এক ক্রেতা ভোরের আকাশকে বলেন, আমি কারওয়ানবাজার থেকে মাঝারি মানের ফুলকপি কিনেছি ৪০ টাকা করে। অথচ পাইকাররা, তা কিনছে অর্ধেকেরও কম দামে। যে কারণে বাজারে স্বস্তি মিলছে না। পাইকারদের কারণেই এখন যে দরে সবজি পাওয়ার কথা সে দরে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনে হয়, পাইকার আর খুচরা বিক্রেতার মধ্যে সমন্ব হওয়া দরকার। তাহলেই সবজির দাম হাতের নাগলে আসবে।

 

গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোয় ৫ কেজির প্রতি পাল্লা মুলা ১০০ টাকা, শালগম ১৩০, শিম ১৭০, পাতা পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ধুন্দল ১৫০, করলা ১৮০-২০০, কাঁচা টমেটো ১৫০, পাকা টমেটো ৫০০-৫৩০, বরবটি ২৪০, বেগুন ১৫০-২০০, ধনেপাতা ৩৫০ ও চিচিঙ্গা ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

 

একইভাবে পটোল ১২০, আলু সাদা ১১০, লাল ১২০, নতুন আলু ২৫০, গাজর ২৫০, ঢ্যাঁড়শ ১৬০ কাঁচামরিচ ১৩০ টাকা। আরো দেখা গেছে, লতি পাল্লাপ্রতি (৫ কেজি) ২২০, জলপাই ১০০, বাঁধাকপি ৩০ টাকা পিস, লেবু এক থেকে আড়াই টাকা প্রতি পিস। পাইকারি বাজারে মাঝারি সাইজের ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস ও বড় সাইজ ২০, কাঁচকলা ২০ টাকায় বিক্রি হয়। এদিকে পাইকারি বাজারে এসে এসব সবজির দাম অনেক বাড়তি দেখা যায়।

 

গতকাল পাইকারি বাজারে শসা ও গাজর বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। গোল বেগুন ৮০, নতুন শিম ৮০, লতি ৬০, মুলা ৩০, শিম ৬০, লম্বা বেগুন ৫০, ঢ্যাঁড়শ ৫০, উস্তে ৬০, পুরোনো আলু ৩০, চিচিঙ্গা ৬০, কচুরগাদি ৬০ ও কাঁচামরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে লাউ ৫০, বাঁধাকপি-ফুলকপি ৪০, চালকুমড়া ৪০, মিষ্টিকুমড়া ৪০ এবং কাঁচকলা ২৫ টাকা হালি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

 

জানতে চাইলে ফুলকপি নিয়ে বিক্রিতা আব্দুল মোতালেব বলেন, আড়তদার কাছে আমার ফুলকপিগুলো মাঝারি সাইজের ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি করেছি। অন্যবারের থেকে এ বছর দাম কিছুটা কম। শীতের শুরুর দিকে দাম সবসময় ভালো পাওয়া যায়। তবে এবার বাজারে চাহিদা একটু কম মনে হচ্ছে, ফলে দামটাও আশানুরূপ পাচ্ছি না।

 

এদিকে সবজির বাজারে সামান্য স্বস্তি থাকলেও মাছ-মাংসের বাজারে উত্তাপ এখনো কমেছে। চাল, আটা, চিনির বেলায়ও একই অবস্থা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারগুলোয় আগের মতোই বাড়তি দামে গরু, খাসির মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়। গরুর মাংস ৭০০ টাকায় আবার কোনো কোনো দোকানে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

 

মাংস বিক্রেতারা বলেন, একটা গরুর কেনা দাম অনেক বেশি, সঙ্গে বিভিন্ন চাঁদা, দোকান খরচ, কর্মচারীর বেতন সব মিলিয়ে ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করলেও লাভ করা যায় না। এর চেয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব না।

 

কিন্তু সমস্যা হয়েছে, এ দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। অনেকে মাংস বিক্রির ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। মাংসের পাশাপাশি মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০, রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩২০, পাবদা মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০, চাষের কই ২৪০, পাঙ্গাস মাছ ২০০, সিলভার কার্প মাছ ২৫০ থেকে ২৮০, সিং ছোট সাইজের মাছ ৪০০, ট্যাংরা মাঝারি ৬০০, ছোট চিংড়ি ৫০০ টাকা, মাঝারি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টাকি মাছ ৪০০, বাগাড় ৮০০, রূপচাঁদা মাঝারিটা ৭০০, কাতল ৩০০ থেকে আকারভেদে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version