বাংলাদেশের শস্যভান্ডার খ্যাত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত গুমাইবিলে ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করছে টিয়া পাখির ঝাঁক। হলুদ ধানে ছেয়ে গেছে পুরো গুমাইবিল। সেই খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে শত শত টিয়া। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন নীলাকাশে এক টুকরো সবুজের আভা।
উড়তে উড়তে কখনো বাঁ দিক, তো আবার কখনো ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে তারা। ওপরে নীলাকাশ, আর নিচে পাকা ধানের সোনালি আভা। এমন আবহে ওরা যেন আনন্দে আত্মহারা। তবে যাদের আনন্দে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের, তারা হলো হাজার হাজার টিয়া পাখি।
পাকা ধানের খোঁজে খোলা আকাশে চক্কর মারছে টিয়া পাখির দল। প্রতিটি ঝাঁকে অন্তত তিন শতাধিক টিয়া থাকে। গুমাইবিলে এ রকম কয়েকটি টিয়ার ঝাঁকের দেখা মেলে। এসব পাখি গুমাইবিলের আশপাশে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি গ্রামেও বিচরণ করছে। সরেজমিনে গিয়ে এমনটাই দেখা যায়।
চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক ও রানীর হাট ডিসি সড়কের দু’পাশ ঘেঁষে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমি গুমাইবিলে। এ বিলের ধান থেকে যে চাল উৎপাদন হয়, তা পুরো বাংলাদেশের আড়াই দিনের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এই শস্যভান্ডারের জমির ওপর বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতের আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি উড়ে বেড়ায়। প্রতিটি ঝাঁকে অসংখ্য টিয়া রয়েছে।
এসব টিয়া জমির ধান খেয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তায় ফেললেও পুরো মাঠে যেন লাল-সবুজে ছেয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখির বিচরণ দেখা মিলে গুমাইবিলে। চলতি বছর ধরে প্রচুর সংখ্যায় টিয়া পাখি আসছে। পাখির সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক জমিতে রীতিমতো পাহারা দিচ্ছেন। সকাল ও বিকেলে টিয়ার ঝাঁক জমির আধা পাকা ধান খেতে আসে। ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য পাহারা দিতে হয়।
তারপরও টিয়া পাখি ধান খেয়ে ফেলে। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর পরপর এখানে প্রচুর সংখ্যায় টিয়া পাখি পাকা ধান খাওয়ার জন্য আসে। বর্তমানে সকাল-বিকাল জমির ওপর ওড়ে বেড়ায় এসব টিয়া পাখির ঝাঁক। তবে ফসলের ক্ষতি করার আশঙ্কা থাকলেও লাল-সবুজে ছেয়ে যাওয়া মাঠে তাদের বিচরণ খুবই সুন্দর লাগে।
মুগ্ধ হয়ে টিয়া পাখির ঝাঁকের দিকে থাকিয়ে থাকলেও দুশ্চিন্তা হয় মাঠ থেকে সরে গেলেই ধান খেয়ে ফেলে বলে। একটি সমীকরণে জানা গেছে, একঝাঁকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টিয়া পাখি একসঙ্গে আসছে ওই এলাকায়। যে জমিতে টিয়ার দল বসছে, সেই জমির ফসলের একেবারে দফারফা হয়ে যাচ্ছে। এদিকে টিয়া পাখির বিচরণ দেখবে নাকি ফসল বাঁচাবে এমন দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় কৃষকেরা।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য