-->

দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়ে পড়া মানুষের জীবনে আলো ছড়াচ্ছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল ব্যুরো
দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়ে পড়া মানুষের জীবনে আলো ছড়াচ্ছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র

‘সবার জন্য উন্মুক্ত কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা’ শ্লোগান নিয়ে সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্মজীবী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝড়ে পড়া মানুষের জীবনে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী দূর শিক্ষণ ব্যবস্থায় মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভ করছে।

বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যলয়ের বিভিন্ন কোর্সে শিক্ষা লাভ করছে বলে বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আজিজুল হক জানিয়েছেন।

 

২০১৯ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এ দূর শিক্ষণ ও অনানুষ্ঠনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের আওতাভুক্ত ৪২টি উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন পরিচালক। দক্ষিণাঞ্চলের ১৩৫টি স্টাডি সেন্টারে চলতি সেশনে ২৯ হাজার ২১৩ ছাত্রছাত্রী উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পড়াশোনা করছে।

 

আগামী বছরেই বরিশাল কেন্দ্রের মাধ্যমে ব্যাচেলর অব মাদ্রাসা এডুকেশন-বিএমইডি কোর্স চালু হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মাদ্রাসা শিক্ষায়ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল স্টাডি সেন্টারে এমএ, এমএসএস প্রোগ্রামের কার্যক্রম চালুু প্রক্রিয়াধীন।

 

১৯৯২ সালে ঢাকার গাজীপুরে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো দূর শিক্ষণ বা অনানুষ্ঠানিক সবার জন্য উন্মুক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়।

 

১৯৯৪ সালে বরিশাল বিভাগীয় সদরে বিশ্ববিদ্যালয়টির আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের পরে ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের ১৩৫টি স্টাডি সেন্টারগুলো উন্মুক্ত, দূর শিক্ষণ ও অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ১৫ লাখ কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝড়ে পরা ছাত্রছাত্রীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে।

 

বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি কেন্দ্রে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিএ/বিএসএস, বিএড, এমএড, বিএজিএড, এমবিএ (বাংলা), বিবিএ এবং ডিসিএসএ কোর্সে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী দূর শিক্ষণ, অনানুষ্ঠানিক ও উপ আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করছে।

 

এসব শিক্ষার্থীর প্রায় বেশিরভাগই কর্মজীবী ও শ্রমজীবী এবং বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি।

 

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জীবনে শিক্ষার আলো ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এমনকি এ বিশ^বিদ্যালয়টি বরিশালের শেখ হাসিনা সেনানিবাসে কর্মরতদের জন্য একটি এইচএসসি প্রোগামে বিপুলসংখ্যক সৈনিকের জন্য উন্মুক্ত ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে।

 

দেশে দূর শিক্ষণ ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ২শ রেডিও সেট বিতরণের মাধ্যমে দূর শিক্ষণ কার্যক্রমের সূচনা হয়। ১৯৬২ সালে অডিও-ভিজুয়াল এডুকেশন সেন্টারের মাধ্যমে এ দূর শিক্ষণ কার্যক্রম নতুন রূপ ধারণ করে। ১৯৭৮ থেকে ৮০ সালের মধ্যে দেশে ‘স্কুল ব্রডকাস্টিং প্রোগাম’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।

 

১৯৮৩ সালে ‘স্কুল ব্রডকাস্টিং প্রোগাম’ ও ‘অডিও ভিজুয়াল এডুকেশন সেন্টার’কে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব এডুকেশনাল মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি-এনআইইএমটি’ নামে একীভ‚ত করা হয়। ১৯৮৫ সালে এনআইইএমটি ‘বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব ডিস্টান্স এডুকেশন-বাইড’ এর সাথে একীভ‚ত হয়। সরকারের অনুরোধে ১৯৮৯ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে দেশে একটি মিশন পাঠিয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ সম্পন্ন করা হয়।

 

এরই ধারাবাহিকতায় সরকার দেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যায় স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এবং এ লক্ষে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ‘উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিল’ পাস করা হয়।

 

২০২১ সালে দেশের দেড় সহস্রধিক স্টাডি সেন্টারে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রে প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থী দূর শিক্ষণসহ উন্মুক্ত ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করেছিল। এর মধ্যে শুধু ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর সংখ্যাই ছিল সোয়া ৪ লাখের মতো।

 

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যেমে এমফিল ও পিএইচডি’র মতো উচ্চ শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ লাভ করছে দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য

Beta version