-->
শিরোনাম
সাগরে ঘন ঘন লঘুচাপে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উত্তরের শীতল হাওয়া

প্রকৃতিতে শীত নামবে কবে?

শাহীন রহমান
প্রকৃতিতে শীত নামবে কবে?

শাহীন রহমান: কাগজে-কলমে শীতকাল শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু ঋতুবৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী ১৫ দিন আগেই প্রকৃতিতে শীত জেঁকে বসার কথা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অতিক্রম করতে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত শীতের দেখা নেই। উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাত ও ভোরের দিকে কুয়াশা ঘনিয়ে শীত শীত অনুভ‚ত হলেও সকালের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন শীতের দেখা মিলছে না এ সময়ে।

 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মূলত উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত ঠাÐা হাওয়ার কারণেই এ সময়ে শীত পড়ে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে পরপর বেশ কয়েকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে তাপমাত্রাও কমেনি। ফলে শীতের অনুভ‚তি পাওয়া যাচ্ছে না। সাগরে বারবার লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় উত্তরের শীতল হাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

 

এ কারণে মূলত শীত নামছে না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, লঘুচাপের কারণে বাতাসে অনেক জলীয় বাষ্প ঢুকে যায়। এটা পুরো উপক‚লজুড়ে বিরাজ করে। আকাশে মেঘমালার সৃষ্টি করে। জলীয়বাষ্প উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে শীতের অনুভ‚তি পাওয়া যাচ্ছে না।

 

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, শীত মৌসুম শুরু হওয়ার অনেক আগ থেকেই উত্তরের অনেক জেলায় শীতের অনুভ‚তি পাওয়া যায়। বিশেষ করে হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ার কারণে এবং হিমেল হাওয়া উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করার কারণে আগে সেখানে শীত নামে। তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যায়। কিন্তু এবার সেখানেও শীতের দেখা নেই।

 

সকাল-সন্ধ্যা ঘন কুয়াশা থাকায় একটু শীতের অনুভ‚তি দেখা দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে দিনে ও রাতে দুই সময়ের তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি। রাজধানীতে শীতের ছিটেফোঁটাও মিলছে না। সারারাত ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হয়। দেখে মনে হয় না প্রকৃতিতে শীতের আগমনী ধ্বনি আছে।

 

আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড বলছে, গত বছরের চেয়ে এবার নভেম্বর মাসজুড়ে গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বা সামান্য বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। ফলে এই সময়ের মধ্যে শীতের কাক্সিক্ষত দেখা নাও পাওয়া যেতে পারে।

 

তারা জানিয়েছেন, আগামী কয়েদিনের মধ্যে সাগরে আরও কয়েকটি লঘুচাপ হতে পারে। এগুলোর মধ্যে এটি নি¤œচাপে রূপ নিতে পারে। লঘুচাপ থাকার সময় তাপমাত্রা একটু বেশি থাকবে। ফলে এই সময়েও শীতের অনুভ‚তি কম থাকবে।

 

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেছেন, মেঘমুক্ত আকাশ থাকা, উত্তর-পশ্চিমের শীতল বায়ুপ্রবাহ না থাকা, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে কাক্সিক্ষত শীতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। সিত্রাংয়ের পরে দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগর এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তিনটি লঘুচাপ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে একটি নিন্মচাপে পরিণত হয়েছে।

 

যার ফলে গাঙ্গেয় উপক‚লে কনকনে উত্তরে হাওয়া ঢুকতে পারছে না। এ কারণে রাতে ও ভোরের দিকে কিছুটা শীত শীত অনুভ‚ত হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের তাপে গলদঘর্ম অবস্থা হতে হচ্ছে।

 

তিনি আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে আরও দুই থেকে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর একটি নিন্মচাপে পরিণত হতে পারে। এর ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শীতল বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হবে। ফলে শীতের অনুভূতি হবে না। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হলে এতে প্রচুর জলীয়-বাষ্পপূর্ণ বাতাস থাকে এবং আকাশে মেঘমালার সৃষ্টি হয়।

 

এই লঘুচাপের বর্ধিতাংশের প্রভাব বাংলাদেশে উপক‚ল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র হয়ে থাকে। ফলে এই বাতাস ধেয়ে এলে দেশের নিন্ম স্তরের বায়ু সেই জলীয়বাষ্প ধারণ করে, এ জন্য তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

 

এ কারণে গত কয়েকদিন দেশে যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, তখন রাতের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছিল। আগামী কয়েকদিন সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকবে। ফলে এই সময়ে শীতের অনুভ‚তি পাওয়া যাবে না।

 

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ও এর পরবর্তী সময়েও বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপের সৃষ্টি হবে, সেগুলো ভারতের দক্ষিণাঞ্চল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার দিকে সরে যাবে। অনেক দূরে সরে যাওয়ায় সেটার প্রভাব বাংলাদেশে থাকবে না। এতে শীতের অনুভ‚তি বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেকটা বেড়ে যাবে।

 

সে হিসাবে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর শীত পড়বে বলে জানিয়েছেন মি. মান্নান। এরপর তাপমাত্রা কমতে কমতে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি ও শেষার্ধে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন শীত জেঁকে বসতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version