-->
সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ

মানবেতর জীবনযাপন করছেন পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মানবেতর জীবনযাপন করছেন পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা

দীর্ঘ তিন বছর ধরে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। দেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে স্থলবন্দরগুলোতে নতুন করে পাথর আমদানিতে এলসি পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

 

গত তিন বছরে ইজারা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা যেমন মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও। তাই সংকটের এ সময়ে দেশীয় খনিজসম্পদ পঞ্চগড়ের পাথরশিল্পকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা দিয়ে দেশের চলমান উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় পাথর শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাথরশিল্পকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা দিয়ে আবারো পাথর উত্তোলন করতে দেয়া হলে দেশে সংকটময় সময়ে যেমন সচ্ছলতা ফিরবে শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের, তেমনি কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে পারবে সরকার।

 

পাথর উত্তোলন বন্ধের তিন বছর পর পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের অবস্থা জানতে সরেজমিনে জেলার পঞ্চগড় সদর উপজেলাসহ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাথর উত্তোলনের কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত জায়গাগুলোতে দেখা গেছে এক স্থবিরতা। একই অবস্থা দিনমুজুর নি¤œ আয়ের পাথর শ্রমিকদের বাড়িতেও।

 

তবে পঞ্চগড়সহ তেঁতুলিয়া উপজেলায় পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর কিছুসংখ্যক পাথর ব্যবসায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে আনা পাথর সংগ্রহ করে দিন অতিবাহিত করলেও সংকট আবারো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডলার সংকটের এ সময়ে পঞ্চগড়ে খনিজসম্পদ পাথর সনাতন পদ্ধতিতে উত্তোলন করা হলে একটু স্বস্তি ফিরবে উত্তরের এ জনপদে। ভিন্ন দেশ থেকে পাথর আমদানি না করে দেশীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশের রিজার্ভ ঘাটতি অনেকাংশে কমে আসবে।

 

পঞ্চগড় পাথর বাজার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও ব্যবসায়ী ডিজার হোসেন বাদশা বলেন, এ মুহূর্তে দেশে চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য পর্যপ্ত পরিমাণ পাথর প্রয়োজন। তাই আমদানিনির্ভর না হয়ে দেশীয় খনিজসম্পদ কাজে লাগাতে পারলে যেমন কর্মসংস্থান পাবে হাজার হাজার শ্রমিক, তেমনি উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি হবে।

 

পাথর ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, যদি আগের মতো আমাদের এই পঞ্চগড়ে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করতে দেয়া হয়, তাহলে যেমন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বাঁচবে তেমনি সরকারেরও অনেকটা উন্নয়ন হবে।তেঁতুলিয়ার পাথর শ্রমিক ইদ্রিস আলী, আকবর হোসেন ও আব্দুর রহিম বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই।

 

গত কয়েক বছর ধরে ঠিকমতো কাজ পাচ্ছি না। আগে পাথর উত্তোলন করে মোটামুটি পরিবারকে নিয়ে সুন্দরভাবে দিন অতিবাহিত করছিলাম। কিন্তু একটা অজানা ঝড়ে সব আটকে গেছে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, আমাদের এই পঞ্চগড়ে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করার অনুমতি দিলে আমাদের মতো হাজার হাজার দরিদ্র পরিবারের পাথর শ্রমিক একবেলা পেট ভরে খেতে পারবে।

 

পঞ্চগড় পাথর ও বালি ব্যবসায়ী যৌথ ফেডারেশনের সভাপতি হাসিবুল হক প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, পঞ্চগড়ে আমাদের এই সংগঠন ছোট-বড় নদীর পাথর কোয়ারি থেকে মোট ১৯টি মহালে ইজারা নিয়ে কাজ করত। প্রতি বছরে ইজারা নিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। কিন্তু গত তিন বছরে ইজারা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা যেমন মানবেতর জীবনযাপন করছে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও।

 

তারা বলেন, সবদিক বিবেচনা করে নির্দিষ্টভাবে স্থান উল্লেখ করে পুনরায় সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করলে পঞ্চগড়ের শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা একটা নতুন জীবন পাবে। কারণ শতভাগ পরিবেশকে সংরক্ষিত রেখে পঞ্চগড়ে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন সম্ভব। আমরা আশাবাদি, সরকার অনুমতি দিলে আমরা পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে শুধু সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version