মাসউদ রানা, দিনাজপুর: দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শতাধিক বছরের পুরনো কবরস্থান রক্ষার দাবীতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। ফুলবাড়ীর ৭ নং শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর (পুরাতন বন্দর), নুরপুর ও দাদপুর গ্রামের এলাকাবাসীর একমাত্র কবরস্থানের শতাধিক কবর কেটে পুকুর ভরাট করার প্রতিবাদে মানববন্ধন পালন শেষে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট।
স্বজনদের বরস্থান রক্ষার দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিন গ্রামের শত শত এলাকাবাসী অংশ গ্রহণ করে। এসময় বক্তব্য দেন, মঞ্জিল মোরশেদ, আব্দুর রহমান, আজগার আলী, বাবলু মিয়া, মোঃ আজিম, মাসুদ, মিজানুর রহমান, অহিনুর ইসলাম প্রমুখ।
বাব-দাদার কবর কেটে স্মৃতি নিশ্চিহ্ন করে ফেলায় স্বজনদের অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং আহাজারি করতে থাকেন। দাদপুর গ্রামের অহিনুর ইসলান জানান, আমার বাপ-চাচা, ছোট বোন, চাচাতো বোনসহ পরিবারের অনেকের কবর কেটে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে।
বাসুদেবপুর গ্রামের আঃ গফুর বলেন, আমার ছেলে সহ পরিবারের অনেকের কবর কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। একই গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (সাগর) বলেন, আমার পরিবারের অনেকের কবর যেখানে ছিলো সেখানে খুজে পাচ্ছি না। আমার দাদা ছিল এই গ্রামের মৌলভী শিক্ষক। তিনি দীর্ঘদিন এলাকার ছেলে-মেয়েদের কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং মসজিদের ইমামতি করতেন। সেই দাদার কবরটিও প্রায় অর্ধেক কেটে ফেলা হয়েছে। কবর কাটার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বজনরা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেন।
সোমবার দুপুর ১ টায় ওই তিন গ্রামের শতশত এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পেশ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আফাজ উদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেন মোশাসহ স্বার্থন্বেষী মহল রাতের আধাঁরে ভেকু মেশিন দিয়ে শতাধিক কবর কেটে পুকুর ভরাট করেছেন। তাদের এ জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মানুষ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেন মোশা বলেন, কবরস্থানে কোনো কবর আমরা কাটিনি। কবরস্থানের পাড় কেটে পুকুর ভরাট করা হয়েছে।
সূত্রমতে, মাঠ পর্যায়ে আমিন জরিপে জনস্বার্থে কবরস্থান হিসেবে চিন্হিত করা হলেও পরবর্তীতে কবরস্থানটিকে পরিবর্তন করে পুকুরপাড় করা হয়।
জানা গেছে, কবরস্থানের জায়গাটি ছিলো জমিদার নিলক চন্ডির। সেই সময় থেকেই এখানে কবর দেয়া হতো। পরবর্তীতে এ অবস্থায় বছির উদ্দিন মন্ডল জমিদারের নিকট থেকে জমিটা কিনে নেন। বছির উদ্দিন জীবিত অবস্থায় তার পরিবারের লোকজন এবং পার্শ্ববর্তী তিন গ্রামের লোকজনও এখানে কবর দিতেন। বছির উদ্দিনের মৃত্যুর পরে তার ওয়ারিশগণও এই কবরস্থানে কবরস্থ করতে কাউকে নিষেধ করেননি।
কিন্তু হঠাৎ করেই মৃত্যু আফাজ উদ্দিনের ছেলেরা রাতের অন্ধকারে অসৎ উদ্দেশ্যে স্মৃতিবিজড়িত দুইশত বছরের পুরাতন কবরস্থানের শতাধিক কবর কেটে পুকুর ভরাট করেন। যা ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত করার অপরাধ করেছেন বলে ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করেন।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে। আইন অনুযায়ী কবরস্থান এবং শ্মশানের জায়গা কেউ নিজস্ব বলে দাবি করতে পারবে না। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর সেকারণে তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে তহশীলদার পাঠানো হয়েছে। তহশীলদার রিপোর্ট দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে তহশীলদারের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, নালিশী জমি নুরপুর মৌজার সাবেক দাগ ১৬৬ এবং ২৭৫ হালদাগের ২.২০ একর জমির মধ্যে পুকুরপাড়ের উঁচু বৃহৎ অংশে অত্র তিন গ্রামবাসীর কবরস্থান হিসেবে স্বরণাতীত কাল হতে ব্যবহার হয়ে আসছে।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, বেশ কিছু কবর এসকেফেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে রাতের অন্ধকারে পুকুরপাড় সমান করে কবরস্থানের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। এলাকাবাসী ও আবেদনকারীগণকে নালিশী জমিতে চলমান রেকর্ডে কবরস্থান পাবলিক ইজমেন্ট (জনস্বার্থ) সৃষ্টি করার জন্য ডিপি খতিয়ানে নালিশী জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুরপাড়ের স্থলে কবরস্থান হিসেবে রেকর্ড করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, অনুমতি ব্যতিত পাড় কেটে পুকুর ভরাট করা আইনগতভাবে কোনো সুযোগ নেই।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য