-->
শিরোনাম

কাঁচামরিচে কৃষকের লোকসান

মেহেরপুর প্রতিনিধি
কাঁচামরিচে কৃষকের লোকসান

মেহেরপুরে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে। এক মাস আগেও জেলার পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম অত্যধিক কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

 

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে জানা যায়, জেলায় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। অর্জন হয়েছে ৪ হাজার ৯৫ হেক্টর। এতে প্রায় ২০ হাজার ২৩৮ টন কাঁচামরিচ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন মরিচের ভরা মৌসুম চলছে। মেহেরপুর জেলায় মরিচ চাষের জন্য অনেক উঁচু জমি রয়েছে। এসব উঁচু জমিতে প্রতি বছরই কাঁচামরিচের আবাদ হয়ে থাকে। তবে এ সময় বিভিন্ন জেলায় কাঁচামরিচ উঠতে শুরু করায় মরিচের দাম পড়ে গেছে।

 

গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। গাছে প্রচুর মরিচ ধরেছে। শনিবার গাংনী হাটে এক মণ মরিচ প্রতি কেজি ১৫ টাকা করে বিক্রি করেছি। জমি থেকে এক কেজি মরিচ তুলতে শ্রমিককে দিতে হয় ৫ থেকে ৭ টাকা। ভ্যান ভাড়া দিয়ে হাটে এনে বিক্রির পর পকেটে কিছুই থাকছে না।

 

আরেক চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এক মণ মরিচ হাটে এনে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়। একজন শ্রমিক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত মরিচ তুলতে পারেন। প্রতি শ্রমিককে দিতে হয় ৩০০ টাকা। অনেক সময় কাজের চাপ থাকলে শ্রমিকের সংকট দেখা যায়। তখন শ্রমিকের মূল্য বেড়ে হয়ে যায় ৪০০ টাকা। ফলে জমি থেকে মরিচ তোলা বন্ধ করে দিয়েছি। গাছেই মরিচ পেকে লাল হয়ে গেছে। আবার অনেক গাছের মরিচ শুকিয়ে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।

 

শ্যামপুর গ্রামের চাষি মিঠুন বলেন, মরিচ তুলে বিক্রির সময় যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে মরিচ তুলে বিক্রি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। ১০ কাঠা জমিতে মরিচের আবাদ করেছিলাম ভালো দাম পাব বলে। কিন্তু তা হচ্ছে না।

 

এদিকে মেহেরপুরের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দাম বেশি নেয়ার প্রশ্নে তারা নিশ্চুপ।

 

পাইকারি ক্রেতা নওয়াপাড়া বাজারের সেলিম হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলায় যে পরিমাণ মরিচের আবাদ হয় তা জেলার চাহিদার তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। আমরা জমির মালিকদের কাছ থেকে কিনে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ বড় বড় জনবহুল শহরে বিক্রি করে থাকি। যেসব এলাকায় পানি প্লাবিত হয়ে জমি পড়েছিল সেসব জমি এখন আবাদের উপযোগী হয়ে উঠেছে। সেসব জেলায় এখন মরিচ উঠতে শুরু করেছে, ফলে দাম পড়ে গেছে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, মেহেরপুরে দুই জাতের মরিচ চাষ হয়ে থাকে। একটি মাগুরা, অন্যটি জিয়া। ফলন ভালো পান চাষিরা। জুন মাসের মাঝামাঝিতে মরিচ উঠতে শুরু করে। সে সময় গাছে মরিচ কম ধরায় দাম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। শীতের শুরুতে প্রচুর মরিচ ধরছে গাছে, তাই দাম পড়ে গেছে।

 

তিনি বলেন, মেহেরপুরে কাঁচামরিচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তাই চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং গাছে প্রচুর মরিচ থাকা সত্ত্বেও গাছ কেটে দিয়ে ওই জমিতে অন্য আবাদ করছেন। মরিচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে দাম পড়ে গেলেও চাষিরা কিছু সময়ের জন্য মরিচ সংরক্ষণ করতে পারত এবং দাম উঠলে বিক্রি করার সুযোগ থাকত।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version