ঋতুবৈচিত্র্যের পালাক্রমে চলছে শীত। নানারকম খাবার, ফুল-ফল, সবজি ও পিঠাপুলির আমেজ নিয়ে হাজির হয় শীতকাল। শীতকালীন খাদ্যতালিকায় প্রথমেই আসে অতি প্রিয় খেজুরের রস। কিন্তু চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় গাছ ও গাছির অভাবে সেই মুখরোচক খেজুর রস এখন বিলুপ্তির পথে। রস না পাওয়ার জন্য গাছির অভাব ও ইটভাটার আগ্রাসনকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। এদিকে শীতের শুরুতেই খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ শুরু করেন আবুল কাশেম নামের এই গ্রামের কৃষক। খেজুরের রস বিক্রি করে কাশেমের এক সিজনে লাভ হয় অর্ধ লাখ টাকা।
গাছ থেকে রস নামাতেই বাজিমাত, নিয়ে যেতে হয় না বাড়িতে বা বাজারে। গাছের নিচে নামামাত্রই ক্রেতা উপস্থিত, কিনে নেয় বোতলে থাকা খেজুরের রস। এমনই চিত্র দেখা গেছে পদুয়া ইউনিয়নের গ্রামের সড়কে।
আবুল কাশেম দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া পদুয়া এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোতেই কেবল রস সংগ্রহ করেন। তার রস ১ নম্বর বলেও নিশ্চিত করেন। আবুল কাশেম বলেন, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসিতে (মাটির পাত্র) রস সংগ্রহ করা হয়। ঝুঁকি নিয়েই আমরা কোমরে রশি (দড়ি) বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করি। প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) গাছে বাঁধি, সকালে রস সংগ্রহ করি। সেই রস নিয়ে নিকটতম বাজারে গেলে সবাই খেজুরের রস খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেন। তবে আমার রস বাজারে নিয়ে যেতে হয় না, গাছ থেকে নেমে যাওয়ার পথেই বিক্রি হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে তাতে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ থাকবে না। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্নসহকারে পরিচর্যা করা। আমি ৩০টির মতো খেজুর গাছ বর্গা নিয়েছি, সবকটির রস সংগ্রহ করে বিক্রি শেষে এক সিজনে আমার ৫০ হাজার টাকার মতো লভ্যাংশ থাকবে। তা দিয়ে সংসার চালিয়ে নিব কোনোভাবে।
আবুল কাশেম বলেন, অন্য মৌসুমে কৃষি চাষ করি। মোটামুটি চাষবাস করেই আমার দিন পার হয়।
তার প্রতি লিটার খেজুরের কাঁচা রস বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫ লিটার রস বিক্রি হয় তার। প্রতিদিন রস বিক্রি করে কোনোদিন ৮০০ আবার কোনোদিন এক হাজার টাকার মতো আয় হয় তার।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য