-->
কৃষিবিজ্ঞানীদের অভিমত

উত্তরাঞ্চলে আমনের নাড়ায় ৩০৮ কোটি টাকার সার সাশ্রয় সম্ভব

মাসুদ রানা, রাজশাহী
উত্তরাঞ্চলে আমনের নাড়ায় ৩০৮ কোটি টাকার সার সাশ্রয় সম্ভব
জমি থেকে ধানের নাড়া সরিয়ে ফেলছেন কৃষক।

মাসুদ রানা, রাজশাহী: উত্তরাঞ্চলে ধান কেটে নেয়ার পর ক্ষেতে পড়ে থাকে নাড়া। কারো কাছে এ নাড়া কেবলই জঞ্জাল। গাঁটের পয়সা খরচ করে নাড়া সরিয়ে চাষিরা নামেন পরের আবাদে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, কেবল চলতি মৌসুমে আমনের নাড়ায় পুরো উত্তরাঞ্চলে অন্তত ৩০৮ কোটি টাকার ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার সাশ্রয় সম্ভব, যা একেবারেই ধারণার বাইরে কৃষকের। তাদের সচেতন করা গেলে রাসায়নিক সারের নির্ভরতাও কমবে।

 

উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা চারটি কৃষি অঞ্চলের আওতায়। কৃষি দপ্তরগুলোর তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে ১৯ লাখ ৭৫৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে চার লাখ চার হাজার ৮৫ হেক্টর, বগুড়ায় তিন লাখ ৮২ হাজার ৪৫০, রংপুরে ছয় লাখ ১৫ হাজার ৯৯৪ ও দিনাজপুরে চার লাখ ৯৮ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এখন চলছে রবি মৌসুম। প্রায় পুরো আমনের ক্ষেত এসেছে রবিশস্য চাষের আওতায়।

 

আলু চাষিদের বক্তব্যের সূত্র ধরে হিসাব করলে, কেবল আলু চাষের সুবিধায় উত্তরের ১৬ জেলার দুই লাখ ৭৭ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির নাড়া সরিয়ে ফেলছেন কৃষক। নাড়ার সঙ্গে প্রতি হেক্টরে ৪৯২ টাকার প্রায় ২৩ কেজি ইউরিয়া, ২২০ টাকার ১০ কেজি টিএসপি, ৯০০ টাকার ৬০ কেজি এমওপি ও প্রায় দেড়শ’ টাকার ১২ কেজি জিপসামের সমপরিমাণ সার হারিয়ে যাচ্ছে। সে হিসাবে পুরো উত্তরাঞ্চলে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপিতেই হারাচ্ছে ৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

 

আলু ক্ষেত থেকে নাড়া সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর অঞ্চলপ্রধান শাহ আলম।

 

তিনি বলেন, ‘আমন মৌসুমের পর বিশেষ করে আলু চাষের জন্য নাড়া রাখেন না কৃষক। নাড়ায় সার সাশ্রয়ের বিষয়টি কৃষককে বুঝিয়েও লাভ হয় না। তবে বোরো মৌসুমে পুরো নাড়াই কৃষক জমিতে চাষ দিয়ে মিলিয়ে দেন।’কিছু কৃষক আলু চাষে নামার আগে ক্ষেতে নাড়া পুড়িয়ে দেন বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলপ্রধান শামছুল ওয়াদুদ।

 

তিনি বলেন, ‘ধানের নাড়া জমিতে মিশিয়ে দেয়া গেলে জৈব পদার্থ যুক্ত হয়। নাড়া পোড়ালেও মিউরেট অব পটাশ যুক্ত হবে। কিন্তু নাড়া পোড়ানোর সময় মাটিতে বসবাস করা নানা ক্ষুদ্র অনুজীব মারা পড়ে। এক্ষেত্রে ভালো পরামর্শ হলো চাষ দিয়ে নাড়া মাটির সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া। এটি সম্ভব হলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কম হতো।’

 

উত্তরের চার আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের হিসাবে ২০২২-২৩ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৩ টন ইউরিয়া, চার লাখ ৪৪ হাজার ৮৪০ টন টিএসপি, ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫ টন ডিএপি ও আট লাখ ৮০ হাজার ২৬ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে।

 

ব্রি রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ফজলুল ইসলাম বলেন, ‘লাগাতার একই ধরনের ফসল চাষের ফলে দিন দিন মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আমরা গবেষণা করছি, কী করে মাটিতে জৈব পদার্থ ফিরিয়ে দেয়া যায়। এরই অংশ হিসেবে উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জাত ব্রি ধান-৮৭ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ ধানের গাছ অনেক লম্বা।

 

ধান কাটার সময় লম্বা নাড়া রেখে কাটতে হবে। নাড়ায় যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম, ফসফেট, নাইট্রোজেন ও জিপসাম রয়েছে। ধান কেটে নেয়ার পর নাড়া রেখে সেগুলো মাটিতে মিশিয়ে দিলে জমিতে এসব জৈব পদার্থ ফিরে আসে। এতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। কৃষকের সারের খরচও বাঁচে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version