-->
হলুদে হলুদে সেজেছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ

মানিকগঞ্জে ৯০ মেঃ টন মধু আহরনে ব্যস্ত মৌ-চাষিরা

আজাদ হোসেন, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জে ৯০ মেঃ টন মধু আহরনে ব্যস্ত মৌ-চাষিরা

আজাদ হোসেন, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জে এখন সরিষার ভরা মৌচাষিরা। হলুদ রংয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে মন ভরে উঠে। গ্রামের দিগন্ত জোরা মাঠ সেজেছে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহে। যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদের মাখামাখি। এই সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছে মৌ-চাষিরা। সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলাতে চলতি মৌসুমে ৯০ মেঃ টন মধু সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার টার্গেট করে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে মৌ-চাষিরা। চলতি মৌসুমে ৫ কোটি টাকা মধু বিক্রয় হবে বলে ধারনা করছে সাধারন মৌচাষিরা।

 

ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, সাটুরিয়া, সিংগাইর, সাটুরিয়া, হরিরামপুর, এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭শ’ মৌয়ালরা সরিষা ক্ষেতে কাঠের বাস্ক মৌমাছি পালন করে মধু উৎপাদন মাঠে নেমে পরেছে। মৌচাষিরা সকালে তাদের বাস্ক থেকে মৌচাষিরা ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যার সময় দল বেধেঁ মৌমাছি মধু আহরন করে আবার ফিরে আসে। মধু ভারত, মালেশিয়া,কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে এলাকার অনেক যুবক।

 

বেকার যুবকের অনেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষন নিয়ে অর্থ উদ্ধাম্বনী চিন্তা ও আত্মবিশ্বাসকে বিনিয়োগ করেছে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন খাতে। তবে যশোহর, গাজিপুর, পাবনা, নারায়নগঞ্জ,সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষিরা ও খুলনা থেকে অনেক মৌচাষিরা মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মধু সংগ্রহের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়েছে। শুধু মধু সংগ্রহের পরে সরিষা যেমন দিচ্ছে তেল, সঙ্গে দিচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এসব এলাকাগুলোতে এখন সৌখিন প্রকৃতি প্রেমিরা বেড়াতে আসছে প্রতিদিন। তারা অপরুপ সোন্দর্য ধরে রাখার জন্য ক্যামেরা বন্দি করে রাখছেন।

 

যুবক যুবতি, কিশোর কিশোরি থেকে শুরু করে প্রকৃতিপ্রেমি সকল শ্রেণির এই অপরুপ দুশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে । এছাড়া ষরিসা চাষে রয়েছে দ্বিগুন লাভ। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য এর ফুল ও পাতা ঝরে জৈব সার তৈরি হয়। ফলে মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার অনেক কৃষক ধানের পাশাপাশি সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পরেছে।

 

চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকুলে থাকার দরুন সরিষা আবাদ করে অনেক কৃষক বেশি লাভবান হয়েছে। মানিকগঞ্জে সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ । সরিষা ফুলের মনমাতানো গন্ধে সবাইবে আকৃষ্ট করে। মৌমাছি ফুলে ফুলে করছে পরাগায়ন। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছি পালনের কারনে ক্ষেতে কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছেনা। ফসল তুলনামূলোক ভাল হয়। এছাড়া ক্ষেতের পাশে বাস্কে মৌমাছি পালন করে মধু উৎপাদনও হচ্ছে নির্বিঘেœ। এ বছর পরিবেশ ও আবহাওয়া ভাল থাকার দরুন সরিষা চাষ করে কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হবেন বলে কৃষকেরা আশাবাদী।

 

তারা ভাল বীজ সনাক্ত করে সঠিক সময়ে রোপনকরে। রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ধরনের সারের পাশাপাশি কীটনাশক প্রয়োগ করেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আগাম ফলন ফলিয়ে তা বাজারজাত করতে পারলে উচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে অধিক লাভ করতে পারবে। এক বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদে খরচ হয়ছে এক থেকে দের হাজার টাকা। ফলন ভাল হলে প্রতি বিঘাতে চার থেকে পাঁচ মন সরিষা আবাদ হবে। বর্তমানে বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতিমন সরিষা আঠার থেকে বিশ হাজার টাকা।

 

অন্যান্য ফসলের চেয়ে সরিষা অবাদ করলে লাভ দ্বিগুন হয়। কাজেই সরিষা চাষে কৃষকেরা বেশি আগ্রহ থাকে। প্রতি বছর মৌচাষিরা নভেম্বর মাস থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য বেড়িয়ে পরে। সাতক্ষীরা এলাকার মৌচাষি হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিদিন তাদের একটি খামারে প্রায় ১০ থেকে ১২ টন মধু আহরন হয়। তাদের মধু স্কয়ার, বেক্সিমকোসহ বিভিন্ন কোম্পানীতে বিক্রিয় করা হয়। তবে মানিকগঞ্জে গত বছরে প্রায় ৬০ মেঃ টন মধু আহরন করা হয়েছে।

 

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপ-পরিচালক আবু মোঃ এনায়েত উল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর ৯শ’ ১২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। গত বছরে সারে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। গত বছরের তুলনায় এবারে প্রায় প্রায় সারে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে।

 

মৌচাষিরা সরিষা ফুল থেকে প্রায় ৯০ মেঃ টন মধু আহরনের সম্ভবনা রয়েছে। ফসলি জমিতে মধু আহরনে জমির কোন ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version