-->
শিরোনাম
নৌযান বিকল ৩০ জনের প্রাণহানির আশঙ্কা

আন্দামান সাগরে ভাসছে ২০০ মালেশিয়াগামী যাত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
আন্দামান সাগরে ভাসছে ২০০ মালেশিয়াগামী যাত্রী

স্বপ্নের মালেশিয়া যেতে হবে যে কোনো মূল্যে। হোক না ঝুঁকিপূর্ণ সাগরযাত্রা। দেড়শ রোহিঙ্গাসহ ২০০ জন মালেশিয়াগামী যাত্রী নিয়ে আন্দামান সাগরে নৌযান বিকল। খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। তারপরও জীবনবাজি রেখে একটু ভালো থাকার আশায় সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে গত ৮ বছরে প্রাণ হারিয়েছে ৮৭০ জন। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা রয়েছে ৫৪৭ জন। এর অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।

 

এ দিকে গত চার সপ্তাহ ধরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসছে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে থাইল্যান্ডের উপক‚লের কাছাকাছি আন্দামান সাগরে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৫-৩০ প্রাণ হারিয়েছে। তারা খাদ্যসংকট ও পানীয় জলের অভাবে মারা পড়েছে। জানা গেছে,কক্সবাজারের টেকনাফের কয়েকটি নৌকার ঘাট থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী একটি ট্রলার থাইল্যান্ডের উপক‚লের কাছে আন্দামান সাগরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে চার সপ্তাহ ধরে ভাসছে। ট্রলারটিতে প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী রয়েছে। এতে ৫০ জন বাংলাদেশি ছাড়া অন্যরা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু।

 

ট্রলারে থাকা এক যাত্রীর অডিও রেকর্ডে শুনা যায়, ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া নৌকাটি গভীর সাগরে চালানোর উপযোগী নয়। গত ১ ডিসেম্বর থেকে তারা সাগরে আছেন। নৌকাটিতে কয়েকদিন আগেই খাবার ও পানীয় জল ফুরিয়ে গেছে। তারা এখন চরম পানিশূন্যতায় ভুগছেন। নৌকায় থাকা নারী ও শিশুদের মধ্যে বেশ আরো কয়েকজন মারা যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানান সংস্থাটি।

 

মালয়েশিয়াগামী ইঞ্জিন বিকল ট্রলারে থাকা বাংলাদেশিদের অধিকাংশ টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। তাদের পরিবারের দাবি, গত চার সপ্তাহ আগে তাদের সন্তানরা পরিবারের অজান্তে দালালদের প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলারে উঠে পড়ে।

 

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জলিল জানান, আমার ছেলে আমিন রানা এ মাসের শুরুতে কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। দুই তিনদিন খোঁজাখুঁজির পর বন্ধু-বান্ধবদের কাছে খবর পাই, তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ট্রলারে উঠেছে।

 

তবে ১৩ জনের পরিচয় ও ছবি সংগ্রহ করা গেছে। তারা হলেন, টেকনাফের হাবির ছড়ার পুতিয়া মাঝির ছেলে রাশেল, বাক্কা কুলুর ছেলে হাসিম, মো. হোসেনের ছেলে রাশেল, সুলেমানের ছেলে ইব্রাহিম, নুর ইসলামের ছেলে উসমান গনি, মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মিজান, সামিয়ার ছেলে নুর আলম, নুর সালামের ছেলে শাহ আলম, কবির আহমদের ছেলে আক্তার ফারুক, মো. কালুর ছেলে মিজান, মো. হাসানের ছেলে মো. হারুন, নুর আহমদের ছেলে মো. ইউনুছসহ ট্রলারে বিভিন্ন এলাকার বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে।

 

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, মালয়েশিয়াগামী ট্রলারটি প্রায় চার সপ্তাহ আগে টেকনাফ উপক‚ল থেকে ছেড়েছে। বর্তমানে ট্রলারের সঙ্গে মালয়েশিয়া থেকে আত্মীয়স্বজনরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে কথা বলছেন। ট্রলারের যাত্রীদের বড় আশঙ্কা ও ভয় হচ্ছে খাদ্য ও পানির সংকট নিয়ে। তাদের মজুত থাকা প্রায় খাদ্য ও পানি ইতোমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। তারা এখন তাদের উদ্ধারে কান্নাকাটি করে দেশে মা-বাবার কাছে খবর পাঠাচ্ছে।

 

ইউএনএইচসিআর বলেছে, নৌকাটি থেকে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদে নামানো না হলে আরো প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। তাদের জীবন রক্ষায় কাছাকাছি দেশগুলোর কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে ২৫-৩০ জন মারা গেছে।

 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সাগরে ভাসমান মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে বেশ কিছু বাংলাদেশি রয়েছে এমন খবর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ তাদের পরিবারের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে অবহিত করা হয়েছে।

 

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মেদ জুবায়ের বলেন, কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের বেশকিছু রোহিঙ্গা সাগরে ভাসমান ট্রলারে থাকার কথা শুনেছি।

 

উল্লেখ্য, আরাকান প্রজেক্ট নামের একটি সংস্থার হিসেবে অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এসব যাত্রায় ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ৮৭০ জন। এদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর নির্যাতনে। অনেকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথাও বলেছেন।

 

এছাড়া ২০১৪ সালে সমুদ্রপথে বাংলাদেশের উপক‚ল থেকে মানব পাচার হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। এতে কারো কারো ভাগ্যের চাকা ঘুরলে ও বেশির ভাগই পড়েছেন দূর্বিষহ যন্ত্রণায়। অসংখ্য লোক অবৈধ পথে ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথ পাড়ি দিতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে বিটেবাড়িসহ শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে পথে বসেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version