-->
শিরোনাম

রাজশাহীর পুঠিয়ায় জমে ওঠেছে খেজুর গুড়ের বাজার

রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীর পুঠিয়ায় জমে ওঠেছে খেজুর গুড়ের বাজার
পুঠিয়ার হাট-বাজার গুলোতে উঠতে শুরু করেছে পাটালি গুড়

খেজুরের গুড় না হলে যেন একদম জমে উঠে না শীত, কুয়াশা ভেজা প্রভাতে গাছ থেকে রসের হাড়া মাটির কলস নামানোর দৃশ্য কিংবা, বাড়িতে উঠানে গুড় পাকানো যেন হরেক পদের পিঠা পুলির উৎসব আয়োজন।

 

শীতের শুরু থেকেই রাজশাহী পুঠিয়ায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। সংগ্রহ করা সেই রস জাল করে তৈরি করেন নলেন ও পাটালি গুড়। ইতিমধ্যে পুঠিয়ার হাট-বাজার গুলোতে উঠতে শুরু করেছে সেই গুড়। শীতে জেকে বসায় আগাম গুড় ও পাটালিতে দাম ভালো পাওয়া যায় বলে এলাকায় পাটালি গুড় তৈরির ধুম পড়ে গেছে।

 

উপজেলার বানেশ্বর, বেলপুকুর, ভালুকগাছী, ধোপাপাড়া, মোল্লাপাড়া, ফুলবাড়ী ও ঝলমলিয়ায় প্রচুর সংখ্যক খেজুর গাছ রয়েছে। এসব এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যায়। বর্তমানে এসব এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবেও খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন অনেকে। শীতের সাথে খেজুর রসের রয়েছে এক অপূর্ব যোগাযোগ। শীত যত বাড়তে থাকে খেঁজুর রসের মিষ্টতাও তত বাড়ে।

 

এ সময় গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হয় পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালী তৈরির ধুম। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়। খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজানো পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের মতো জুড়িই নেই।

 

পুঠিয়া উপজেলার গাছি জালাল উদ্দিন জানান, তার লিজ নেওয়া ও নিজেরসহ প্রায় ১৫০ টার মত খেজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে বানেশ্বর, ঝলমলিয়া ও ধোপাপাড়া হাটে বিক্রি করেন। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। গত বছর তিনি ৮০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করেছেন। এবছরও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

 

একই এলাকার সবুর আলী বলেন, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে স্থানীয় হাটে বিক্রি করেন। এবার খেজুর গুড় ও পাটালির দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে কিছু অসাদু গাছীরা গুড় তৈরিতে ব্যবহার করছে চিনি। গুড়ের কালার এবং দানা তৈরির জন্য কিছু লোভী অসাধু লোক গুড়ের সাথে চিনি মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। এতে করে সঠিক মানের গুড় পাচ্ছেনা ক্রেতারা।

 

জ্বালানিসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ বছর লাভের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবে দাম ভালো পাওয়ায় তা পুষিয়ে নেবে বলে আসা গাছ মালিকদের। ভোরে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন। পরিবারের সবাই রস থেকে গুড় তৈরি, কলস পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে সহযোগিতা করছেন। আবার দুপুরেই গাছিরা বাটাল, হাসুয়া, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়) নিয়ে ছুটে চলেছেন মাঠে।

 

পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর উপজেলায় ২শত ৮৫ হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৬০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এবং উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২ হাজার মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। তবে সঠিকভাবে গাছের পরিচর্যা না করা ও এক শ্রেনীর অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীর কারণে খেজুর গাছ আজ বিলুপ্তির পথে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version