বরিশাল নগরীর প্রবেশদ্বারে থাকা নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনালের অব্যবস্থাপনায় যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। স্ট্যান্ডের বাইরে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায় এই ভোগান্তির মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। এতে অন্য যানবাহনের যাত্রীদের যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয় তেমনি অপ্রশস্ত সড়কে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। প্রবেশদ্বারে যানজটের প্রভাব পরে মূল শহরেও। নগর কর্তৃপক্ষ নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালকে নতুন স্থানে নিতে তোড়জোড় চালালেও কবে নাগাদ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে তা জানে না কেউ।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে ১১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক বরিশাল সিটি করপোরেশনের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন যেমন চলাচল করে তেমনি শহরের অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র পরিবহনগুলোও চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে চার-পাঁচগুণ গাড়ির চাপ বেড়েছে। অথচ প্রস্থে সংকীর্ণ সড়কটি প্রশস্ত করা হয়নি। পুলিশ বলছে, আইন মানছে না বাস মালিক-শ্রমিকরা। যে কারণে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বিশৃঙ্খলা।
যানজট নিরসনে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন শহরের বাইরে কাশিপুরে ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনের। তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব পাঠান এবং তার অনুক‚লে কাজও শুরু হয়।
বেসরকারি একটি কোম্পানির প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, নথুল্লাবাদ ও রূপাতলীতে বাসচালকদের নৈরাজ্য আসলে বন্ধ হওয়ার মতো না। বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে যাত্রী তুলতে পারে। কিন্তু তারা তা না করে বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হয়ে মূল সড়কের পাশে সারি সারি বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করান। তাদের কারণে অন্য গাড়িতে যারা থাকেন তারা যানজটে আটকে যান। এসব বিষয়ে ট্রাফিক বা সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই।
জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, কাশিপুরে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাত দশমিক ৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করা হয়। যদিও ট্রাক টার্মিনালের কয়েকটি ভবনের কাজ শুরু হওয়ার পরে তা আর এগোয়নি।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে নগরীকে যানজটের হাত থেকে রক্ষা করতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ২০২১ সালের ২১ জুন নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল সরিয়ে কাশিপুর ট্রাক টার্মিনালে এবং রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে দপদপিয়া সেতুর নিচে নেয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার ছয় মাস পার হলেও কোনো টার্মিনাল স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
রূপাতলী বাস টার্মিনালের এক নারী যাত্রী আফসানা আক্তার কলি বলেন, আমার কর্মস্থল শহরের বাইরে। এজন্য প্রতিদিন রূপাতলী থেকে থ্রি-হুইলারে করে শহরের বাইরে যেতে হয়। বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গোল চত্বরে সব সময়ে চার-পাঁচটি বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকে। বাসগুলো এমনভাবে দাঁড়ায় যাতে অন্য গাড়ি যেতে না পারে।
রূপাতলীর বাসিন্দা আজমল আলম বলেন, বাস মালিক সমিতির কাছে কিছু বললেই তারা বলে গোল চত্বরে টিকিট কাউন্টার। এসব প্রতারণা। মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের টেনেহিঁচড়ে বাসে তুলে আটকে নিয়ে যায়। এসব করতে গিয়েই শহরের যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, বাস টার্মিনালের ভেতরে সংস্কারকাজ চলায় বাস ভেতরে রাখা যাচ্ছে না। এজন্য সড়কে বাস দাঁড়াচ্ছে। উন্নয়নমূলক কাজে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে তো হবেই। সিটি মেয়র রূপাতলী বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আমরাও তার সিদ্ধান্তে একমত।
নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম বাবলু বলেন, বাসগুলো সড়কের ওপরে যাত্রী নামায় আবার ওঠায়। এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেছি। এভাবে সড়কের ওপর যাত্রী ওঠানো নামানো হলে নগরীতে যানজট তৈরি হয় এটি আমরা জানি। কিন্তু বাসগুলো যে টার্মিনালে ঢুকে যাত্রী নামাবে সেই জায়গা আমাদের নেই। এজন্য মেয়র চেষ্টা করছেন টার্মিনাল স্থানান্তরের।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ট্রাফিক বিভাগ আপ্রাণ চেষ্টা করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এজন্য বাস টার্মিনাল যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এই দুটি বাস টার্মিনালে বাসের বিশৃঙ্খলার কারণে পুরো নগরীতেও যানজটের সৃষ্টি হয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য