-->
শিরোনাম

বগুড়ার চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে বিপ্লব, চাষাবাদ ২৩ গুণ বৃদ্ধি

এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া
বগুড়ার চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে বিপ্লব, চাষাবাদ ২৩ গুণ বৃদ্ধি
বগুড়ায় সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের ভুট্রা ক্ষেতে কৃষক

এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া: বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষের বিপ্লব ঘটছে। চার বছরের ব্যবধানে এই অঞ্চলে ভুট্রা চাষ প্রায় ২৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন যমুনা নদীর অববাহিকার এ উপজেলার কৃষকেরা।

 

শুধু এই উপজেলায় নয় বিস্তৃত যমুনার চরাঞ্চলে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বগুড়ার ধুনট ও সারিয়াকান্দির সীমানা বিধৌত চর এলাকার কৃষকেরা ভুট্টা চাষে অর্থনেতিকভাবে এখন অনেকেই সফল হয়েছেন। এজন্যই চরাঞ্চলের কৃষকেরা ভ‚ট্রা চাষে বেশ অগ্রগামী। ভুট্টাই যেনো তাদের জীবন জীবিকার জন্য আয়ের অন্যতম ফসল।

 

মূলত পানি সহিষ্ণু এই ফসল চাষে খরচ খুব সীমিত ও বাজারে দাম ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন ভুট্টায়।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, চরের মাঠে মাঠে সবুজ ভুট্টা গাছে ভরে উঠেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে ভুট্টার কচি সবুজ পাতা। এরই মধ্যে অনেক জমিতে ভুট্টা গাছে মোচা বের হয়েছে। সে মোচার ভেতর সোনালি ভ‚ট্টা দানা উঁকি দিচ্ছে। এতে কৃষকদের মনে আশার আলো দানাবেধে ওঠতে শুরু করেছে।

 

সারিয়াকান্দি কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত ২০১৯ সালে এখানে চাষ হয়েছিল মাত্র দেড় হাজার হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে চাষ হয় সেখানে ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। তবে চলতি বছরের রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষের পরিমাণ এক লাফে দ্বিগুন বেড়েছে। এবার আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

 

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে চাষের এই পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।

 

কৃষকদের কাছে জানা যায়, সারিয়াকান্দির বাঙালি ও যমুনা নদীর বিভিন্ন চর রয়েছে। এসব চরে বন্যার পর চাষিরা সব রকমের ফসলের চাষাবাদ করে থাকেন। তবে এখন তারা ভ‚ট্টার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। যদিও কয়েক বছর আগেই চরের চাষিদের কাছে প্রিয় ছিল মরিচ চাষ। কিন্তু কৃষকরা যখন মরিচ ফসল বাজারে তোলেন তখন দাম থাকে না। পরে দাম বাড়লেও কৃষকরা দাম না পাওয়ায় মরিচ চাষের নিরুৎসাহী হয়েছেন। বরং সেই স্থান দখল করে নিয়েছে ভুট্টা। কারণ ভুট্টার দাম বাজারে সব সময় ভালো থাকে।

 

কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ছোনপাচা চরের আয়েন উদ্দিন বলেন, আমি ৮ বিঘা জমিতে ভ‚ট্টার আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় সেচ, সার ও অন্যান্য খরচ বাবদ পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সেখানে প্রতি মণ ভ‚ট্টা বেচতে পারবো ১৪ শ থেকে ১৫ শ টাকা।

 

একই চরের ফরিদ মন্ডল চাষ করেছেন ১০০ বিঘার বেশি জমিতে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতি বিঘায় জমি থেকে ভুট্টার আশা করছেন ৫০ থেকে ৬০ মণ। সোনালী ভ‚ট্টা বিক্রি করে মোটা অংকের নগদ টাকা ঘরে উঠবে আশা করেন ফরিদ মন্ডল।

 

তিনি বলেন, চরে ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটেছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হালিম বলেন, চরের চাষিরা ফসল চাষে আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। সেখানে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় যে কোনো ফসল ভালো উৎপাদন করতে পারছেন। ভুট্টা চাষ করে চরের চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বেশি। এ কারণে চরের চাষীরা সবাই এখন ভুট্টা চাষে এগিয়ে আসছেন। ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি এবং ফসল নষ্ট হবার তেমন কোন বালাই না থাকায় ভুট্টা এখন চরাঞ্চলের অন্যতম ফসলে পরিণত হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

 

মন্তব্য

Beta version