-->
শিরোনাম

ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মেহেরপুরে বেড়েছে সরিষার চাষ

ফজলুল হক, মেহেরপুর
ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মেহেরপুরে বেড়েছে সরিষার চাষ
মেহেরপুরে বিস্তীর্ণ মাঠে সরিষার চাষ হচ্ছে। ছবিটি বুধবার তোলা

ফজলুল হক, মেহেরপুর: রসনা বিলাস বা তরকারি রান্নার কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদন হলো ভোজ্যতেল। সম্প্রতি সেই তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মেহেরপুরে সরিষার চাষ বেড়েছে। আমাদের দেশে রান্নার কাজে সয়াবিন ও সরিষার তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। দেশে আমদানিনির্ভর সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় মেহেরপুরে চাষিরা এবার ব্যাপক হারে সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছে।

 

গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ বছর বাজারে সরিষার দাম ভালো থাকায় ভালো লাভবান হওয়ার আশা কৃষকের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের তথ্যমতে, জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল চার হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে। তবে সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার চাষ হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৩৩০ হেক্টরের বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট হাজার ৭৪৫ টন।

 

এবার আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূল থাকায় চাষ বেড়েছে, ভালো ফলনের আশা করছে কৃষক। জেলায় সরিষার চাষ বাড়ায় বাইরের জেলা থেকে এ বছর মৌ চাষিরা মৌ বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছে মেহেরপুরে। জমির পাশেই বাক্স বসিয়ে মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করছে। কৃষকরা মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা পাচ্ছে। ফলে এ বছর সরিষার উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছে চাষিরা। বিঘাপ্রতি সরিষা চাষে খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। সরিষা বিক্রি করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পাওয়ার আশা চাষিদের। চান্স ফসল হিসেবে স্বল্প সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো ধান চাষ করার স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা।

 

মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার পুরুন্তপুর গ্রামের সরিষা চাষি একরামুল হক বলেন, আমাদের নাগার বিল ও ছুঁচো খোলার বিলে এ বছর পানি জমেনি। অনাবৃষ্টির কারণে মাঠ শুকনা ছিল। চান্স ফসল হিসেবে এ বছর মাঠের পর মাঠ সরিষা আবাদ হয়েছে। অল্প সময়ে আবাদটি হয়ে থাকে। ফলে এবার সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো চাষ করা সম্ভব হবে। সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, অনুক‚ল আবহাওয়ায় সরিষা চাষ ভালো হয়েছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে। সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বেশি করে সরিষা চাষ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

মুজিবনগর উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের আলি আহাম্মেদ বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার নি¤œাঞ্চলে সরিষার চাষ বেড়েছে। ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধিও সরিষা চাষ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। মৌয়ালিরা মধু সংগ্রহের জন্য মৌবাক্স স্থাপন করায় পরাগায়ন হচ্ছে। ফলে উৎপাদনও বাড়বে বলে দাবি কৃষকের। পৌর এলাকার সরিষা চাষি আব্দুল হক বলেন, সরিষা থেকে তেল, গবাদিপশুর খাবার হিসেবে খৈল হয়। এ ছাড়াও সবুজ পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সরিষা অনেক সুন্দর হয়েছে। আশা করি ফলন ভালো হলে ও দাম ভালো থাকলে লাভ হবে। এবার মাঠে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরিষা চাষ হয়েছে। প্রত্যেক চাষিদের উচিত খাদ্যশস্যসহ যেসব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় সেগুলো চাষিদের তৈরি করা।

 

সাতক্ষীরা জেলার মৌচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, সরিষা চাষ ও লিচু গাছে মুকুল আসলে আমরা মেহেরপুরে আসি। মেহেরপুরে উৎকৃষ্ট রকমের মধু পাওয়া যায়। মেহেরপুরের মধু খেতেও খুব স্বসাধু। কারণ মাটির গুণে ফসল ও গাছের ফুলে মধু হয়। মেহেরপুরের মধু আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারি। মেহেরপুরের কৃষকরা আমাদের খবর দিয়ে ডেকে আনেন। কারণ মৌমাছি ফুলে বসলে পরাগায়ন ভালো হয়। উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায়।

 

মেহেরপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, চান্স ফসল হিসেবে ধান বা পাট কাটার পর যে সময়টা পাওয়া যায় সেই সময়টায় চাষিদের সরিষা চাষের পরামর্শ দেয়া হয়। ৮০ থেকে ৮৫ দিনে সরিষা হয়ে যায়। এ টাকা দিয়ে চাষিরা বোরো ধান করতে পারে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়া জেলার নিম্নাঞ্চালে সরিষার চাষ বেড়েছে। মৌবাক্স স্থাপন করায় সরিষার ফলন বাড়বে বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version