-->
শিরোনাম
বাড়ছে উদ্বেগ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে গড়ে ১২৫ শিশু

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে গড়ে ১২৫ শিশু

প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম। কোনোভাবেই এ সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন এনজিও সরেজমিনে কাজ করলেও, সে অর্থে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা যাচ্ছে না । কক্সবাজারের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরে পাঁচ বছরে এক লাখ ৫৮ হাজার জন্ম নেয়া শিশুর নিবন্ধন করা হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার দেয়া তথ্যে বলা হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে গত পাঁচ বছরে জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। 

 

১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে মোট শিশুর সংখ্যা এখন প্রায় ছয় লাখ। গত পাঁচ বছরে টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে জন্ম নিয়েছে প্রায় আড়াই লাখ শিশু। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রচারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালালেও তা তেমন একটা কাজে আসছে না। তাই পরিবার পরিকল্পনায় জোর দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছে ।

 

জনগোষ্ঠী হিসেবে স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত শিশু জন্মদান স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। এমনিতে তারা শ্রমবাজার দখল করছে, গাছপালা, পাহাড়-বন উজাড় করেই চলছে। চাষাবাদ, ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে স্থানীয়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে। তার ওপর প্রতিদিন নতুন শিশুর আগমনে শঙ্কায় রয়েছে এলাকাবাসী।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের এ অনিয়ন্ত্রিত শিশু জন্মদান শুধু উদ্বেগই বাড়াচ্ছে না; এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা তৈরি করছে । কারণ ক্যাম্পের নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে তাদের বেড়ে উঠতে হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কল্যাণে ক্যাম্পের মধ্যে তাদের উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে; কিন্তু সেটিও সীমিত পরিসরে।

 

জাতিসংঘ শরাণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিসংখ্যান জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুক্ত হচ্ছে গড়ে ১২৫ শিশু। ফলে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে সাড়ে ১৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাদের মধ্যে একাধিক বিয়ে ছাড়াও বাল্যবিয়ের প্রবণতা বাড়ছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গারা এভাবে সন্তান জন্ম দিতে থাকলে এক দিন টেকনাফ-উখিয়াসহ কক্সবাজারজুড়ে স্থানীয় অধিবাসীরাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে; পাল্টে যাবে জনমিতি।

 

ইউএনএইচসিআরের তথ্যানুযায়ী, টেকনাফ ও উখিয়ার ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত করা নিবন্ধনের হিসাব এটি। অনিবন্ধিত শিশুরা রয়ে গেছে এ হিসাবের বাইরে। ক্যাম্পগুলোতে আশ্রিতদের মধ্যে ৫৮ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে।

 

কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নারীদের মধ্যে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৩০০ পিল, পুরুষদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৩২৫ কনডম বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন লাখ ১০ হাজার ২৫৬ জনকে জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন প্রয়োগ ও ১৪ হাজার ৪৬২ জনকে ইমপ্লান্ট করা হয়েছে।

 

পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-পরিচালক পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণে উৎসাহিত করতে ক্যাম্পগুলোতে সর্বোচ্চ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

 

তিনি জানান, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবন্ধিত মোট শিশুর সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার। পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩৫টি এনজিওর ৩ হাজার ৫০০ কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন।

 

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী স্বল্প সময়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। ওই সময় আসা নারীদের ৩৫ হাজারের বেশি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। ফলে পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই ক্যাম্পগুলোয় প্রচুর শিশুর জন্ম হয়।

 

এর আগে শরণার্থী বিষয়ক এক সভায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণে জোর দেয়ার কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতিবছর ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্মের তথ্য তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যথাযথ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও চলাফেরার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত এসব শিশুর মধ্যে অনেকেই ভুগছে তীব্র মানসিক অশান্তিতে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকে অল্প বয়সেই কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাস, মাদক পাচারসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের।

 

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। আগের তুলনায় সচেতনতা বেড়েছে। তবে কাজটা খুব কঠিন।

 

রোহিঙ্গা শিবিরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কার্যকর করা কঠিন জানিয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু দৌজা নয়ন বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে একেবারেই অন্ধকারে ছিল। ফলে এটা নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই। এরপরও তাদের সচেতন করতে নানা কর্মসূচি চলছে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version