-->
শিরোনাম

বাঁশির সুরে জীবন চলে

মো. ফিরোজ, বাউফল (পটুয়াখালী)
বাঁশির সুরে জীবন চলে
বংশীবাদক জগদীশ চন্দ্র শীল

মো. ফিরোজ, বাউফল (পটুয়াখালী): তার বাঁশির সুরের মূর্ছনায় সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া বন্দরে হেঁটে হেঁটে বাঁশিতে সুর তুলছেন বংশীবাদক জগদীশ চন্দ্র শীল। বাঁশের বাঁশির সুরে ভেসে আসছে পল্লি কবি জসীম উদ্দীনের লেখা ‘আমার হাড় কালা করলাম রে, আমার দেহ কালার লাইগা রে’ গানের কথা। পথচারীরা দাঁড়িয়ে তার বাঁশির সুর শুনছেন। কেউ কেউ আবার বাঁশিও কিনছেন। বিক্রির টাকায় চলে বংশীবাদক জগদীশ শীলের চার সদস্যের সংসার।

 

বলা যায়, ‘বাঁশির সুরে জীবন চলে’ তার। হাটে বাঁশি বাজানো ও বিক্রির ফাঁকে জগদীশ শীলের আলাপচারিতা হয় ভোরের আকাশ প্রতিনিধির সঙ্গে।

 

আলাপচারিতায় জানা যায়, বরগুনা জেলার বেতাগী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে তার বাড়ি। বাবা কৃষ্ণশীল ছিলেন একজন হতদরিদ্র কৃষক। পরিবারের অভাব অনটনের মধ্যেই জন্ম নিয়েছিলেন জগদীশ শীল। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি। ছোটবেলা থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা ছিল তার। স্থানীয় এক ওস্তাদের কাছে নেন হাতেখড়ি। ৩০ বছর বয়সে যোগ দেন যাত্রাদলে। প্রায় সাত বছর ওই যাত্রাদলে বংশীবাদক ছিলেন।

 

একসময় ভেঙে যায় যাত্রাদল। বেকার হয়ে পড়েন জগদীশ শীল। অন্য পেশাতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেননি। বাঁশিতে ফিরে আসেন তিনি। স্ত্রী রমলা রানীকে নিয়ে শুরু করেন বাঁশি তৈরি। সেই বাঁশি নিয়ে নেমে পড়েন স্থানীয় হাটবাজারে। অলিগলিতে হেঁটে হেঁটে বাঁশিতে সুর তুলেন। জয় করে নেন মানুষের মন। করেন বাঁশি বিক্রি।

 

একসময় ছেলে জয়ন্ত শীল ও ছেলের বউ বন্নিকা রানী তার বাঁশি তৈরিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। গড়ে তুলেন পারিবারিক কুটিরশিল্প। কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেন বাঁশি তৈরির কাঁচা বাঁশ। বাঁশি বিক্রির পরিধি বেড়ে যায় তার।

 

স্থানীয় হাটবাজারের গন্ডি পেরিয়ে সারা দেশে শুরু হয় তার পদচারণা। দেশের বিভিন্ন হাটবাজার, শহর-বন্দর, স্কুল-কলেজ, গ্রামীণ মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশি বিক্রি করেন তিনি। এভাবেই ৩৫ বছর ধরে চলছে জগদীশের ভ্রাম্যমাণ বাঁশি বিক্রি। পনেরো টাকা থেকে শুরু করে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বাঁশি। দৈনিক এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার বাঁশি বিক্রি করেন তিনি।

 

জগদীশ চন্দ্র শীল জানান, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলায় কেউ হাতে বাঁশের বাঁশি তৈরি করেন না। তিনিই একমাত্র বাঁশি তৈরি করেন এবং হাটবাজারে বাঁশি বিক্রি করেন। দিন দিন বাঁশির চাহিদা কমছে। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাঁশি বাজায় না, চেষ্টাও করে না। হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে একাধিক বার সরকারের কাছে সহায়তার আবেদন করেও পাননি কোনো সহায়তা।

 

তার অভিযোগ, যারা কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত না, তারাও সরকারের সহায়তা পায়। কিন্তু তার পুরো পরিবার কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও সহায়তা থেকে বঞ্চিত।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version