আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ মৌসুমে সরকারিভাবে বেশি পরিমাণে কৃষকদের বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। সে জন্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চল জুড়ে ভুট্টার উঠতি চারা শোভা পাচ্ছে। ঝিলমিল করে বাতাসে দোলছে ভুট্টার সবুজপাতা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা অধির আগ্রহে মনের খুশিতে জমিতে কাজ করছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার নদী বেষ্টিত বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়।
তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক বিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ মণ ভুট্টা উৎপাদিত হয়। বিঘাপ্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন। চলতি রবি মৌসুমে জমিতে ফলনের আকৃতি ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা এখন জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। অনেক কৃষক ভুট্টার জমিতে সাথি ফসল হিসেবে শীতকালীন শাকসবজির আবাদও করেছেন।
সূত্রমতে, চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। কিন্তু ৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এক হাজার ৭৭৬ হেক্টর বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৬ হাজার ৭৫০ কৃষককে বিনামূল্যে দুই কেজি করে মোট ১৩ হাজার ৫০০ কেজি ভুট্টার বীজ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০ কেজি করে ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার বিনামূল্যে দেয়া হয়। অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে এ মৌসুমে কৃষকরা ভুট্টার প্রণোদনা পান। গত বছর বাজারে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় কৃষকরা বেশি লাভবান হন। এ কারণে প্রণোদনা কর্মসূচির বাইরেও অধিক পারিমাণে কৃষকরা জমিতে এ মৌসুমে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি ও ফলন ভালো করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষি আব্দুল লতিফ জানান, এবছর বন্যায় তাদের বীজতলা-সবজি ক্ষেতসহ সকল ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে তারা ভুট্টা চাষ করেছেন দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা জানান, এবারই প্রথম তিনি ভুট্টার আবাদ করেছেন। আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ভুট্টার প্রচুর আবাদ হয়। ভুট্টার ফলন বেশি হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন।
দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারহানুল কবির জানান, গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য তারা মাঠে সরসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টা চাষ করার প্রদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছেন। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ করলে সেগুলো দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার জানান, জেলায় এবছর ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এক হাজার ৭৭৬ হেক্টর বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় ভুট্টার রোগ-পোকমাকড় দমনে ও অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য