-->
শিরোনাম

কীর্তনখোলা নদী দখল মুক্ত করতে মাঠে নামছে বিআইডব্লিউটিএ

বরিশাল ব্যুরো
কীর্তনখোলা নদী দখল মুক্ত করতে মাঠে নামছে বিআইডব্লিউটিএ

কীর্তনখোলা নদী দখলে মানচিত্রের ম্যাপ থেকে তা হারিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছেন নদীতে চলাচলরত লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ, কর্তৃপক্ষের। হুমকির মুখে বরিশাল শহর রক্ষা বাদ। সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষের। 

 

বৃহস্পতিবার বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসন কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন।

 

কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এটা নিশ্চিত হয়েছে যে প্রায় সারে ৪ হাজার দখলদার ঘিরে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী কীর্তখোলা নদীর।

 

সর্বশেষ বরিশাল নগরীর ৯নং ওয়ার্ড রসুলপুর এলাকায় নদীর তীর দখল করছে এক প্রভাবশালী সংবাদ প্রকাশের পর মাঠে নামে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশ।

 

তবে দখলদারদের কাউকেই ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। রসুলপুর এলাকায় একজন দখলদার রীতিমতো নদীর ভিতর বাঁধ দিয়ে ভরাট চেষ্টা চালাচ্ছে। যা প্রত্যক্ষ করেন নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

শুধু রসুলপুরেই নয়, পুরো নগরীর নদীর আশেপাশে নানা কৌশলে নদীর পাড় দখল করে নিয়েছে হাজার হাজার দখলদাররা।

 

বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ বন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল রসুলপুরে গিয়েছিলাম। আমাদের সাথে নৌ পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজন ছিল। সেখানে আমরা দখলদারকে পাইনি। তবে তাদের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়েছে।

 

তারা তাদের কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সাথে দেখা করবেন। তবে এই জমি নদীর সেটা আমরা দেখেই বুঝতে পেরেছি।

 

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সপ্তাহ দুই ধরে এই জমিতে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করা হয়েছে। এরপর টিন দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। পরে মাটি ভরাট করা হবে। এরপর স্থাপনা করা হবে।

 

এ বিষয়ে দখলদার সৈয়দ ইমাম হোসেন রাজু বলেন, আমরা ১৯৯৮ সালে কামরুন্নেছার কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেছি। যা ২০০০ সালে রেকর্ড করা হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই জমির হোল্ডিং নম্বর, খাজনা, করসহ সকল কাগজপত্র আপটুডেট করা আছে। আমরা নতুন করে দখল করিনি।

 

এদিকে শুধু রসুলপুরই নয়, কীর্তনখোলা নদীর বিভিন্ন স্থানে যে যার মতো করে নদী দখল করে নিয়েছে। জানা গেছে, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠার জন্য কীর্তনখোলা নদীর তীরের ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি বিআইডবিøউ- টিএর অনুক‚লে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু ৫৬ বছরেও সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে অধিকাংশ সম্পত্তি নামে-বেনামে দখল করে নেন প্রভাবশালীরা। নৌবন্দরের উত্তর দিকে জেল খালসহ রসুলপুর এলাকায় ২৮ একরের মধ্যে ২০ একর বেদখল হয়ে আছে।

 

বরিশাল নৌবন্দরের উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণের রূপাতলী সিএসডি গোডাউনের খালের দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তীর বিআইডব্লিউটিএ’র। বাকি অংশ জেলা প্রশাসনের। তবে বন্দর-সংলগ্ন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরে উচ্চ জলরেখা থেকে তীরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত উভয় তীরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর রয়েছে। যার অর্ধেকই বেদখলে চলে গেছে বলে জানালেন নদী গবেষক রফিকুল আলম।

 

রফিকুল আলম আরো বলেন, বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে ৪ হাজারের বেশি অবৈধ দখলদারের তালিকা থাকার কথা। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের কাছে জেলার প্রায় ২২ হাজার দখলদারের তালিকা আছে।

 

যদিও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, দু তিন বছর আগে হাইকোর্টের রায়ে ১০ একর ৮২ শতাংশ জমি পুরোপুরি হাত ছাড়া হয়ে যায় বিআইডব্লিউটিএর।

 

এ ছাড়া পোর্ট রোডের মৎস আড়ৎ সংলগ্ন এলাকার কয়েক একর জমি মৌজার নাম পরিবর্তনের কারণে বেদখলে রয়েছে। একই ভাবে ১ একর ২৭ শতাংশ জমির উপরে বিআইডবিøউটি’র অনুমতি ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা পার্ক স্থাপন করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। যদিও বিআইডব্লিউটিএ’র দাবী পার্ক নির্মাণ হলেও এই জমি তাদের দখলেই রয়েছে। এ ছাড়া ২ একর ৫৭ শতাংশ জমি নদী গর্ভে হয়েছে বলে তারা দাবী করেছেন।

 

বিআইডব্লিউটিএ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ. রাজ্জাক হোসেন আরও বলেন, বরিশাল কীর্তনখোলা নদী নয়, আমাদের আওতাধীন যেকোনো নদীর পাড় কেউ যদি দখলের চেষ্টা করে। বিষয়টি আমাদের কাছে জানালে আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো। এছাড়াও আমাদের অভিযান চলমান আছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version