রফিকুল ইসলাম রফিক, গাইবান্ধা : গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লামঝাড় ইউনিয়নের সাহারবাজার এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যসামগ্রী তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই ওই বেকারিতে তৈরি করা হয় শিশুদের খাদ্যসামগ্রী । নামসর্বস্ব বেকারীতে নোংরা ও ক্ষতিকর ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি এসব খাদ্যসামগ্রী যাচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। এতে বাড়ছে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের উদাসীনতায় উপজেলায় গড়ে উঠেছে যত্রতত্র এসব বেকারি কারখানা।
জানা যায়, গাইবান্ধা-সাদুল্লাপুর সড়ক ঘেঁষেই সাহারবাজার। বাজার থেকে খামারবল্লমঝাড় সড়কের মাত্র ১০০ মিটার দূরেই পান বিক্রেতা ডাবলু মিয়ার টিনশেড বাড়ি। তিন বছর আগে ওই এলাকার রিপন মিয়া বাড়িটি ভাড়া নেন। রাস্তা থেকে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে বেকারির কারখানা রয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে এ বেকারিতে শিশুদের খাদ্য (স্থানীয় ভাষায় শনপাপড়ী), চানাচুর,কেকসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ১২ জন তরুণ ময়দা আর বিশেষ ক্যামিকেল দিয়ে মেঝেতে খামির করছে। পাশে একটি চুল্লিতে ময়দা আর অন্য চুল্লিতে চিনি । এক পাশে খোলা ড্রামে রাখা পোড়া তেল। কয়েকজন তরুণ খামির টানাটানি করছে। তরুণদের শরীরের ঘাম ঝরে খামিরে পড়ছে। চিনি ও অন্যান্য খাবারের ওপর মশা মাছি পড়ে আছে। সেই খামিরের ওপর রং আর স্যাকারিন দিয়ে তৈরি হচ্ছে শনপাপড়ী। পাশে কয়েকজন শিশু খালি হাতে প্যাকেটজাত করছে এসব খাদ্য। চারজন নারী শ্রমিক প্যাকেটের ভিতরে নেবেল ডুকিয়ে ল্যাম্পের আগুনে মুড়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মগবুল হোসেন বলেন, এ কারখানার খাদ্যসামগ্রী স্থানীয় বাজারসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব খাদ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও শনপাপড়ী শিশুরা খাচ্ছে। শহরতলী গ্রামের এসব কারখানা প্রশাসনের নজরে অব্যশই আছে। কিন্তু তাদের বললেও ব্যবস্থা নেই না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুস সাকিব বলেন, পাম্পওয়ের জাতীয় তেল, ক্ষতিকর রং, চিনি ব্যবহার করে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি খাদ্য খেয়ে শিশুদের ওভারওয়েট, ক্ষুদামন্দাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্ক রয়েছে। এছাড়াও এসব খাদ্যে পেটের পীড়া রোগও হতে পারে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাদ্য পরিহার করতে হবে।
কারখানার মালিক রিপন মিয়া বলেন, 'ছোট বেলায় বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে এসব তৈরি করা শিখেছি। আমি গরীব মানুষ, ছোট ব্যবসায়ী। বিএসটিআই অনুমতি নাই । কোন ক্ষতিকর রং বা ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয় না । শ্রমিকরা হাত পা পরিস্কার করেই এসব বানায় । শিশুদের দিয়ে আগে কাজ করাতাম। তাদের বাদ দিয়েছি।
শিগগিরিই অভিযান চালিয়ে অনুমোদনহীন কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফুল আলম।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য