-->
শিরোনাম
ছোট্ট নৌকাই যাদের ঘরবাড়ি-সংসার

আধুনিক সভ্যতা থেকে ছিটকে পরা জনগোষ্ঠী মান্তা

মো. ফিরোজ, বাউফল (পটুয়াখালী)
আধুনিক সভ্যতা থেকে ছিটকে পরা জনগোষ্ঠী মান্তা
তেঁতুলিয়া নদীতে নৌকায় বসতি গড়ে তুলেছে মান্তা জনগোষ্ঠী

মো. ফিরোজ, বাউফল (পটুয়াখালী):  তেঁতুলিয়া নদীতে কাঠের তৈরি নৌকায় জলে ভেসে ভেসে কাটিয়ে দিচ্ছে জীবন। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম কেটে যাচ্ছে এভাবেই। ছোট্ট একটা নৌকাই যাদের ঘরবাড়ি-সংসার। নৌকাতে জন্ম। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য কাটে সেখানেই এবং সেই নৌকাতেই মৃত্যু। আধুনিক সভ্যতা থেকে ছিটকে পরা এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিজেদের মান্তা জনগোষ্ঠী বলে দাবি করে।

 

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে বেশকিছু বাতি ও সোলার লাইটে আলোকিত হয়ে ওঠে উপজেলার বিভিন্ন নদীর কিনার। সারাদিনের রোজগার দিয়ে সন্ধ্যায় চুলা জ্বালায় নৌকার ছাউনিতেই। রাতেই হয় ভোজন। এভাবেই বসবাস করে আসছেন ওই নদীর কিনারে থাকা মান্তা পরিবারগুলো। বাংলাদেশের নাগরিক হলেও অন্যদের মতো সাধারণ মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম এই জনগোষ্ঠী।

 

দেশের বিভিন্ন এলাকার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারগুলো এখন তেঁতুলিয়া নদীসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ নদীতে নৌকায় বসতি গড়ে তুলেছে। বাকেরগঞ্জ-বাউফল-দশমিনা-গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন নদীর কিনারঘেঁষা, লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ এবং ডাকুয়া নদীর তীরে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস।

 

বিশাল এই জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো দূরের কথা, নাই স্বাস্থ্যসেবা অথবা পরিবার পরিকল্পনা এবং জ্ঞান নেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের নিয়ম-কানুন। বেশির ভাগই রোগ-বালাই সাড়াতে যান কবিরাজ, বৈদ্যের কাছে। একটু বয়স হলেই সন্তানেরাও মাছ ধরায় সাহায্য করে বাবা-মাকে। স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠে না বেশির ভাগেরই। দেশের প্রধানত উপক‚লবর্তী জেলা-উপজেলাগুলোর নদীর তীর ধরে হাঁটতে থাকলে দেখা মিলবে সারি সারি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় একটি করে পরিবার, সে পরিবারের সব সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না মিশে আছে ওই ছোট্ট নৌকাটিতে।

 

মান্তা জনগোষ্ঠী পরিবারের সদস্য শাহিন হাওলাদার ভোরের আকাশকে বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলার বাসিন্দা ছিলেন তারা। নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে তারা প্রথমে বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া তার পরে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর কিনারে ঘাঁটি বাঁধে। তারপর থেকেই তারা স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে এই নদীর কিনারে বসবাস করে যাচ্ছেন। দিনরাত মাছ ধরে বাজারে বেচে তাই দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাতে হয়।

 

এভাবেই বিভিন্ন নদীর কিনারে শত শত নৌকায় নারী-পুরুষ, শিশুসহ শত শত মানুষের বসবাস। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি প্রভৃতি মৌলিক অধিকার থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত মান্তা সম্প্রদায়। মান্তা স¤প্রদায় জনগোষ্ঠীতে শিক্ষার হার নেই বললেই চলে। এর বড় কারণ হচ্ছে, নদীতে ভাসমান জীবন কাটানোর ফলে এ সম্প্রদায়ের পড়াশোনা করা হয়ে ওঠে না।

 

এ ছাড়াও অভাব-দারিদ্র্য তাদের শিক্ষা বিমুখ করে রেখেছে। তবে বর্তমানে নতুন প্রজন্মের অনেকে শিশু পড়াশোনার চেষ্টা করছে। অসুখ-বিসুখে মান্তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগে মান্তারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। নদীদূষণের সরাসরি প্রভাব পড়ছে এই সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version