রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন অপরাধের তীর্থস্থান। পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা যায়, সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি, মানবপাচার এবং মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধ নথিভুক্তির ঘটনা বেড়েছে। শুধু ২০২২ সালেই হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৩১টি, যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ।
গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোহাম্মদ ইসমাইল নামের এক রোহিঙ্গার চার আত্মীয়কে খুন করে সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী। গত বছর সেপ্টেম্বরে অপহরণ করা হয় তাকে। এরপর বাম হাত ও পা কাটার পর তাকে ফেলা হয় খালে।
কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে একটি প্লাস্টিকের মাদুরের ওপর বসে তিনি বলেন, তারা বারবার আমার কাছে জানতে চাইছিল, কেন আমি তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে দিয়েছি। বললাম, তোমাদের সম্পর্কে আমার জানা নেই এবং আমি কোনো তথ্য দিইনি।
পা হারানো ইসমাইল এখন বাবা-মা, স্ত্রী ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন। তিনি তার জীবন নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত। পাশাপাশি তিনি অনুধাবন করতে পারেন কেন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে পালাচ্ছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে মরা অথবা মৃত্যু ভয়ে দিন পার করার চেয়ে সাগরে মরাটাই বহুগুণ শ্রেয়।
নজিবুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ক্যাম্পে হত্যার ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাদ যাচ্ছেন না নেতারাও। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, ক্যাম্পে বাড়ছে ভয় ও উদ্বেগ। ক্রমাগত বেড়ে চলা সহিংসতার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রার পেছনে এটি একটি প্রধান কারণ।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ২০২২ সালে অন্তত ৩৪৮ রোহিঙ্গা সাগরে নিহত হয়েছে। গত বছর প্রায় ৩ হাজার ৫৪৫ রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭০০-এর মতো।
জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। প্রশাসন ব্যর্থ এটা বলা যাবে না। কারণ ১৩ লাখ অলস লোককে নিয়ন্ত্রণ করা একটুখানি কথা না। তার ওপর বিভিন্ন অপরাধী চক্রের অপতৎপরতা শক্ত হাতে প্রতিহত করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য