কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে এক সময়ের পাট চাষাবাদ ও মোড়ক ব্যবহারে মানুষের মাঝে নানা কারনে এখন তেমন কোন আগ্রহ নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও যেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এবার পাট শিল্প বিকাশে এবং এ খাতের উন্নয়নে অবদান রাখায় পাট দিবসে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনেকে পেয়েছেন শুভেচ্ছা স্মারক।
বিশেষ করে পাটখাতের উন্নয়নে গবেষনা কার্যক্রম, পাটবীজ আমদানীতে নির্ভরশীলতা হ্রাস, দেশীয় প্রযুক্তিতে পাটবীজ উৎপাদনে স্ব-নির্ভরতা অর্জন, প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পন্যের উৎপাদন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাঁচা পাটের চাহিদা ও উচ্চ মূল্য থাকলেও পাট চাষীরা তা না পেলে চাষাবাদের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাবে এটাই স্বাভাবিক। পাট চাষাবাদে নানা ঝুঁকি এবং বিক্রির ক্ষেত্রে নানাহ জটিলতা বিদ্যমান। একটা সময়ে পাট চাষ, পাটজাত সামগ্রী তৈরি, পাট ও পাটজাত পণ্যাদির ব্যবসা-বাণিজ্য বহুকাল ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতো।
কিন্তু চলমান প্রযুক্তির যুগে এখন যেনো এ পাটচাষাবাদ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। অথচ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পূর্ববর্তী সময় থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে পাট চাষাবাদ এবং কাঁচা পাটের ব্যবসা ছিলো এ অঞ্চলের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের একমাত্র আয়ের মাধ্যম।
সূত্রগুলো আরও জানায়, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আন্তজার্তিক বাজারে পাটখাতে প্রচুর প্রতিযোগিতা ছিলো। পাট রপ্তানিকারক সংস্থার কাছে এবং বিজেএমসি ও বিজিএমএ পরিচালিত জুটমিলসহ বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত জুট ও বস্ত্র-সুতা মিলে কাঁচা পাট প্রক্রিয়াজাত করনে যথেষ্ট চাহিদা ছিলো। কিন্তু নানা কারনে ওইসব জুটমিল গুলো একে একে বন্ধ হতে থাকলে পাটের চাহিদাসহ আন্তজার্তিক বাজারে রপ্তানি কমে যাওয়ায় ধস নামে চাষাবাদের উপর। পাশাপাশি পাট বপন ঘিরে আগ্রহ হারায় কৃষকরা।
চলমান মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে পরিবেশের বিষয়টি নতুন করে দেশব্যাপী আলোচনায় আশায় পাট পণ্যের চাহিদা নতুন করে বাড়তে শুরু করায় পাট চাষাবাদ নিয়ে আগামী বর্ষা মৌসুমে কৃষকদের মাঝে উৎসাহ বাড়ছে। এ পাট শিল্প পুরোদমে চালু থাকলে দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, সোনালী আঁশখাতে পাটের সঙ্গে বাঙ্গালী জাতির গ্রামীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে এবং অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসাবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস বলে মনে করেন স্থানীয় অর্থনীতিবীদরা। দেশের শিল্পাঞ্চল, কর্মসংস্থান ও রপ্তানী বানিজ্যে পাটখাত অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে। দেশের কয়েক কোটি মানুষ পাটশিল্পের অগ্রযাত্রা ও আধুনিকায়নের ধারা বেগবান করতে বস্ত্র ও পাটজাত মোড়কে বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ প্রনয়ণ করলেও স্থানীয় ভাবে তা আজও আলোর মুখ দেখেনি।
সরকার ২৫টি জুটমিলে কর্মরত সকল শ্রমিকের গ্যাচ্যুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডসেক সুবিধার মাধ্যমে চাকুরী অপসারনমূলক এবং পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও মোড়ক ব্যবহার কার্যক্রম বাড়াতে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে নগন্য হয়ে গেছে সকল ক্ষেত্রে পাটের অবদান। বিশেষ করে দেশের রপ্তানী বানিজ্যেও পাটের চাহিদা ৯০ থেকে ০৩ ভাগে নেমে এসেছে।
স্থানীয় পরিবেশবিদ ও কৃষকদের একাধিক সূত্র জানায়, ধানচাষীদের মতো অধিকাংশ পাটচাষী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ধানচাষীরা যেমন এ অঞ্চলে ধার-দেনা পরিশোধ এবং পরিবারের প্রয়োজন মিটাতে আমন ধান কাটা মৌসুমের শুরুতেই চালকল মালিক ও ব্যবসায়ী সেন্ডিকেটের স্বীকার হয়। তারপর স্বল্প মূল্যে তা বিক্রি করতে বাধ্য হন তেমনি পাট চাষীরাও পারিবারিক প্রয়োজন মিটাতে মৌসুমের শুরুতেই পাট বিক্রি করে দেন।
এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ বানিজ্যিক নগরী লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারসহ জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বড় বড় হাট বাজার জুড়ে পাটের আড়ত কিংবা পাট ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ওইসব চিত্র এখন আর নেই। অপরদিকে সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন ও প্লাষ্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ এবং একাধিক পণ্যে পাটের মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলেও ব্যবসায়ী চক্র তা মানছে না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ভ্রাম্যমান আদালত যেনো রহস্যজনক কারনে নিরব দর্শক। এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার মুঠো ফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য