-->
শিরোনাম

সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক

খালেদ আহমদ, সিলেট
সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক

খালেদ আহমদ, সিলেট: সুনামগঞ্জ জেলায় হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ২০৫ কোটি টাকার বিশাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর ফসল আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষার জন্য এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি হতাশাজনক। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। গৃহীত প্রকল্পের কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। কাজ শুরুই হয়নি অর্ধেক প্রকল্পের। এতে নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ আগামী ফেব্রুয়ারির মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামার আগে বাঁধ নির্মাণ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাওর পাড়ের হাজারো কৃষক।

 

স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে গঠন করা হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। এসব হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৮৯টি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। আর অর্থ ছাড় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।

 

হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কারণ ফেব্রুয়ারির শেষ বা মধ্য মার্চে চেরাপুঞ্জির কাছে অবস্থিত সুনামগঞ্জে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামে। কিন্তু জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসেও অধিকাংশ হাওরে কাজ শুরু হয়নি। প্রায় অর্ধেক স্থানে পিআইসিও গঠন হয়নি। তাই কৃষকরা এবারো তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। এবারো কি বানের জলে ভেসে যাবে ২০০ কোটি টাকার নাম মাত্র ফসল রক্ষা বাঁধ?

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯টি বাঁধের কাজ অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি মাত্র ৫৫০ টিতে। তবে ‘বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি’- বলেছেন সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। কমিটি সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে বাঁধের কাজ সম্পন্নের জন্য চলতি সপ্তাহে সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, ‘জামালগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্ব ম্ভরপুরসহ বেশ কয়েকটি হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করে বাঁধের কাজ সময়মতো শেষ করার তাগিদ দিয়েছি।

 

হাওর রক্ষা প্রকল্পে বিলম্ব ও অনিয়ম হলে ছাড় নেই। তবে সরকার এসব বিষয়ে খুবই সতর্ক।’ জানা যায়, বাঁধ নির্মাণে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য ৭ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করার নিয়ম। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট হাওরের সুবিধাভোগী ৩ কৃষক, ১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাথমিক অথবা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা অন্য কোনো শিক্ষক, স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং একজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সদস্য করার নির্দেশনা রয়েছে।

 

গত বছর সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ৪৮টি হাওর এবং অন্য ছয়টি অঞ্চলের জন্য ৭২৭টি বাঁধ নির্মাণের জন্য পিআইসি গঠন করা হয় ৭২৭টি। এসব পিআইসি গঠন নিয়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। নেপথ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাঁধ নিয়ে ব্যবসা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ধর্মপাশা উপজেলায় বাঁধ নির্মাণকে ঘিরে।

 

এবারো হাওরে সময়মতো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু ও পিআইসি গঠনে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষুব্ধ কৃষক ও কৃষক সংগঠনগুলোও। তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরের পাঁচ নালিয়া ভাঙনে বাঁধ করার জন্য তিনটি পিআইসিকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পিআইসিগুলো শনিবার পর্যন্ত কেবল ভাঙনে সামান্য কিছু বাঁশ পুঁতে কাজ শুরু করেছে।

 

এই বাঁধের পিআইসি সভাপতি সাঞ্জব উস্তার জানান, এ বছর স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ পিআইসি নিয়ে রশি টানাটানি করায় কার্যাদেশ দিতে বিলম্ব হয়েছে। মাটিয়ান হাওরপাড়ের বড়দল নতুন হাটির কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, আরো এক মাস আগে এই বাঁধের আশপাশ থেকে পানি নেমেছে। ইচ্ছে করলে জানুয়ারির প্রথম দিকেই কাজ শুরু করা যেত।

 

‘জামালগঞ্জ উপজলা হাওর বাঁচাও আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, উপজেলার পাগনার হাওরের ১৮টি বাঁধের মধ্যে মাত্র ৬টিতে কাজ শুরু হয়েছে। হালির হাওরেও একই অবস্থা। উপজেলার ৫৯টি বাঁধের মধ্যে ৩০টির কাজও বাস্তবে শুরু হয়নি। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ১ হাজার ৮৯টি হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প জেলা কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০টি পিআইসি কাজ শুরু করেছে।

 

উল্লেখ্য, সিলেট বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি বোরো ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ চলছে। সব ঠিক থাকলে সাড়ে ১৩ লাখ টন চাল কৃষকের গোলায় উঠবে। কিন্তু খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে নদী ও হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নেমে অকালবন্যা দেখা দেয়।

 

গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জে ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমির ১২১ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়।

মন্তব্য

Beta version