কুমিল্লার লাকসাম, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙারি ব্যবসার অন্তরালে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে শক্তিশালী বিভিন্ন অপরাধী সিন্ডিকেট। ফলে তারা এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মাদক, জুয়া, যৌনসহ বিভিন্ন অপরাধী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ওইসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অপকর্ম প্রকাশ্যে চালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরব ভ‚মিকা নিয়ে এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ওইসব দোকানি ও সিন্ডিকেট সদস্যরা স্বল্প বেতন কিংবা কমিশনে স্থানীয় মাদকসেবী, বখাটে যুবক ও ছিঁচকে চোরদের এ পেশার কাজে লাগায়। তাদের ব্যবহার করে নানা ধরনের লোহার মালামাল, টিন, স্টিল, তামা, পেপার, বই, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও টায়ার জাতীয় দ্রব্য কম দামে ক্রয়ে বিশাল মজুত গড়ে তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল-কারখানার যন্ত্রাংশ বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এ পেশায় ৫টি উপজেলায় প্রায় দু’শতাধিক ভাঙারি দোকানের সঙ্গে প্রায় দুই সহস্রাধিক শিশু-কিশোর এবং নারীরা জড়িত। এ ছাড়া রয়েছে এ অঞ্চলে প্রায় ৩০টি ভাঙারি মালামাল ভাঙার কারখানা। এদের মূলত সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
সুত্রগুলো আরো জানায়, ভাঙারি ব্যবসায়ীরা তাদের নিযুক্ত ফড়িয়া-হকার কিংবা খুচরা ক্রেতাদের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে হরেক রকম সিন্ডিকেট সদস্যরা রাতের অন্ধকারে টিউবওয়েলের মাথা, লোহার পাইপ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক সামগ্রী, নতুন-পুরোনো রড, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর কিংবা আবাসিক এলাকায় পরিত্যক্ত পড়ে থাকা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এসে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে।
এ ৫টি উপজেলার ভাঙারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন টনকে টন বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ ও স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের ব্যবহার করে এ ভাঙারি ব্যবসাটি খুবই লাভজনক বিধায় উপজেলাগুলোর আনাচে-কানাচে, শহর ও গ্রামাঞ্চলের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান।
ভাঙারি দোকানগুলোতে শ্যালু যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স মোটর, রেলওয়ের স্লিপার ও পাতসহ অন্যান্য মূল্যবান যন্ত্রাংশ, ফ্যান, দরজা-জানালার গ্রিল, টিউবওয়েল, যানবাহনের যন্ত্রাংশ, সাইকেল- রিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনের চাকা, বিদ্যুৎ সরঞ্জাম, কৃষি যন্ত্রপাতি, অ্যালুমিনিয়াম ও তামার দ্রব্য, লোহার পাত ও পাইপ এবং রডসহ বিভিন্ন লৌহজাত দ্রব্য প্রকাশ্যে বেচাকেনা ও প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে। এসবের পিছনে স্থানীয় মাদক, ছিঁচকে চোর, বখাটে যুবক, যৌন মহিলা ও শিশু-কিশোর, কিশোরীদের বিভিন্ন অপরাধী সেন্ডিকেট সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে জেলা দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলাগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য