সেতু পার হলেও দিতে হয় খেয়া পারাপারের ভাড়া: ভোগান্তিতে তিন উপজেলার বাসিন্দারা

বরিশাল ব্যুরো
সেতু পার হলেও দিতে হয় খেয়া পারাপারের ভাড়া: ভোগান্তিতে তিন উপজেলার বাসিন্দারা
বরিশালের কদমতলা ব্রিজ এলাকায় খেয়া পারাপার

সেতু পার হলেও দিতে হবে খেয়া পারাপারের ভাড়া। এ যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে বরিশালের কদমতলা ব্রিজ। তবে তিন উপজেলার সীমানা স্থল হওয়ায় নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। উপজেলাগুলো হচ্ছে বরিশাল সদর উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা। আর প্রশাসন নিরব থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদী এই তিন উপজেলার বাসিন্দারা।

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সেতু থেকে চলাচলে কোনো টেন্ডার আহব্বান করিনি। যদি কেউ যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকে তবে তা বেআইনি। অভিযোগ আসলে তদন্ত স্বাপেক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

জানা গেছে, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন শায়েস্তাবাদ জিসি হিজলা উপজেলার হেডকোয়াটার ভায়া গাজীবহাট, কাজিরহাট জিসি, মিয়াবহাট এবং একতার হাট সড়কে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে সেতু। নয়াভাঙ্গুলী নদীর উপজেলা কদমতলায় ৪৪০ মিটার পিসি গার্ডারে এই ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ এই সেতু বাস্তবায়ন করে।

 

গত ডিসেম্বরে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে মানুষ ও যানবাহন পরাপার করছে এই সেতু ব্যবহার করে। কিন্তু সেতু থেকে পার হলেও যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে খেয়ার ভাড়া। যার কারণে প্রতি মানুষকে গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা, মটরসাইলে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, ভ্যানে ২০ টাকা ও অটোরিক্সা ভাড়া বাবদ ৩০ টাকা নিচ্ছি খেয়া ইজারাদার।

 

সেতু পার হওয়া মুলাদীর বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম জানান, খেয়া চলাচল বন্ধ, কিন্তু খেয়াঘাটের ইজারাদারকে খেয়ার ভাড়া দিতে হবে। এটা কোন নিয়ম হলো। হারুন নামে অপর এক যাত্রী জানান, কদমতলা ব্রিজে জিম্মী হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। সীমানা জটিরতায় কারণে প্রশাসন নিরব ভ‚মিকা পালন করছে। আর এই সুযোগে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে খেয়া ঘাটের ইজারাদাররা।

 

হাবিবুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, চলতি বছরে সরকার কাউকেই এই সেতুর কোন ইজারা দেয়নি। তারপরও দিনের বেলায় জন প্রতি ১০ টাকা রাতে ২০ টাকা, মটর সাইকেল ৩০ টাকা রাতে ৬০ টাকায় পারাপার করে। প্রতিবাদ করলেই করে নাজেহাল। সরকারের নির্মিত ব্রিজ দিয়ে কেউ পায়ে হেটে পারাপাড় হলেও গুনতে হয় খেয়া পারাপারের ভাড়া।

 

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চুন্ন বলেন, এই সেতুতে কোন টোল নেই। গায়ের জোরে টোল আদায় করছে। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। এভাবে মানুষকে জিম্মী করে অর্থ আদায় করতে দেয়া হবে না। মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মন্টু বিশ্বাস বলেন, সেতু পারাপারে অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানার পর এক ইউপি সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। সেতু থেকে এখন আর টোল না নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমার ইউনিয়ন থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কোন খেয়াঘাট ইজারা দেয়া হয়নি। মুলত, একটা মসজিদের উন্নয়নের জন্য এই খেয়াঘাট দেয়া হয়েছে। ওই খানে থেকে ওঠা টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা হবে। অভিযুক্ত খেয়াঘাট ইজারাদার তোতা ব্যাপারী ও কবির ব্যাপারী বলেন, আমরা খেয়ার ইজারাদার। খেয়ার বাহিরে এই কোন টাকা নেয়া হয় না। কেউ কেউ মিথ্যা অভিযোগ করছে।

 

এ ব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন, এই খেয়াঘাটটি আমার নয়। মুলত এটি ৩ উপজেলার সীমানায় পড়েছে। দেখতে সদর উপজেলার মধ্যে মনে হলেও আসলে এটি সদর উপজেলা থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে। এ বিষয়ে কথা হয়েছে।

 

জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদী ইউএনও কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য