-->
শিরোনাম

ইজারার নামে ফসলি জমির মাটি উত্তোলন: হুমকিতে বাঁধ-বসতবাড়ি

মো. জালাল উদ্দীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ইজারার নামে ফসলি জমির মাটি উত্তোলন: হুমকিতে বাঁধ-বসতবাড়ি
শিবগঞ্জের চকের ঘাট এলাকায় পাগলা নদী খননের বালু ইজারা নিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। ছবিটি রোববার তোলা

মো. জালাল উদ্দীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: শিবগঞ্জে পাগলা নদী খননের বালু ইজারার নামে ফসলি জমির মাটি উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে পদ্মা নদী রক্ষা বাঁধ। একই সঙ্গে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১০-১২ ফুট গভীর করে এসব মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

 

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার চকের ঘাট এলাকায় পাগলা নদী খননের বালু ইজারা নিয়ে মাটি কাটছে ইজারাদার শামীম। কিন্তু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ও তার পরিবার এসব নদীর মাটি বিক্রি করছেন পার্শ্ববর্তী ইটভাটায়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, দুই বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৃতপ্রায় পাগলা নদী খনন করে। এ সময় খননের বালু নদীর দুই পাড়ে ফসলি জমির উপরেই রাখা হয়। গত বছর এসব অতিরিক্ত বালু ইজারা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন। এরপর ইজারাদাররা মাটির উপরে থাকা খননের বালু তুলতে শুরু করে।

 

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ পাগলা নদীর দুই পাড় ইজারা দেয়া হয়। আমরা দেখেছি, সব জায়গায় শুধু খনন করা অতিরিক্ত বালু তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু উপজেলার বিনপাড়া চকের ঘাটে বালু কাটার পর নদীর বন্দোবস্ত করা ফসলি জমির মাটিও কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ও তার পরিবারের লোকজন এসব মাটি বিক্রি করছে খননের বালু ইজারা নেয়া ব্যক্তিদের কাছে।

 

বিনপাড়া গ্রামের দোকানদার আলতাস আলী জানান, গত বছরই ইজারার পর খননের অতিরিক্ত বালু কেটে নেয়া হয়েছে। অথচ ইজারার নাম করে নদীপাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। গত এক দেড় মাস ধরে ১০-১২ ফুট গর্ত করে মাটি কাটা হচ্ছে। নদী খননের বালু সর্বোচ্চ ২-৩ ফুট ছিল।

 

উজিরপুর ইউনিয়নের বিনপাড়া রবিউল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা বেগম জানান, এত গর্ত করে মাটি কাটছে যে, বর্ষায় পানি চলে আসবে বসতবাড়িতে। আমরা নদী খননের বালু তুলতে দেখেছি। আগে নদীর পাশে যে ফসলি জমি ছিল, খননের বালুগুলো তার উপরে ফেলা হয়। মাটির উপরে খননের বালুর উচ্চতা ২-৩ হাত হতে পারে। অথচ কাটা হচ্ছে দুই মানুষ উঁচু সমান ফসলি জমির মাটি।

 

বিনপাড়া গ্রামের মোবারক আলী বলেন, নদীর পাড় এভাবে কাটার কারণে বর্ষার সময়ে আসা অতিরিক্ত পানিতে তলিয়ে যাবে শত শত বসতবাড়ি। কারণ নদীপাড়ের মাটি কাটার কারণে পাশের বসতবাড়ি ও নদীর মধ্যেকার উচ্চতার পার্থক্য থাকল না। ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকে সর্বনাশ করে ফেলবে বসতবাড়ি ও অন্যান্য ফসলি জমি।

 

আমজাদ হোসেন জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা নদীর বাঁধ। সর্বনাশা পদ্মা নদী থেকে রক্ষা করতে নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা নদীর পাশে থাকা পাগলা নদীর ফসলি জমি কেটে নেয়ার কারণে পানি পদ্মা নদীর বাঁধের কাছাকাছি চলে যাবে। এতে দুর্বল হয়ে পড়বে বাঁধ।

 

এ বিষয়ে বালু ইজারাদার শামীম আলী নদী খননের বালুর বাইরেও গভীর করে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, নদীপাড়ে থাকা খননের বালু উঠানো হয়ে গেছে। সেই জমির মালিক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তার আত্মীয়স্বজনরা এসব মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছে। তাই আমরা কেটে নিয়ে যাচ্ছি।

 

সরেজমিনে গিয়েও পাওয়া যায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়াকে। মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার বোনের জমি কাটা হচ্ছে। তার পাশের জমি আমার, তাই দেখতে এসেছি।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন জানান, শুধু নদী খননের বালু ইজারা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে এক ইঞ্চি মাটি কাটা যাবে না। যদি কেউ নদীপাড়ের মাটি কাটে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version