-->
শিরোনাম

দইয়ের হাড়ি এখন বগুড়ার মৃৎশিল্পীদের একমাত্র ভরসা

এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া
দইয়ের হাড়ি এখন বগুড়ার মৃৎশিল্পীদের একমাত্র ভরসা
মাটির বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত নন্দীগ্রামের এক কুমার

এনামুল হক রাঙ্গা, বগুড়া: কালের বিবর্তনে বগুড়ার নন্দীগ্রামে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী শখের মৃৎশিল্প। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের স্থান দখল করেছে প্লাস্টিক, দস্তা ও অ্যালুমিনিয়ামের সামগ্রী। আধুনিক এসব বাহারি পণ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না মৃৎশিল্প কারিগরদের। তবে এ পরিবর্তনে তারা পেয়েছে নতুন পথ। আদি পেশা টিকে রাখতে দইয়ের হাড়ি, সড়া, বাটি এখন উপজেলার কুমার সম্প্রদায়ের একমাত্র ভরসা।

 

আগের দিনে অনেক কদর ছিল এই মৃৎশিল্পের। কুমাররা হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান দিয়ে তৈরি করত বিভিন্ন ধরনের শখের মৃৎশিল্প। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও তারা তৈরি করত পূজা পার্বনের জন্য নানা রঙের বাহারি মাটির জিনিস। আর এসব সামগ্রী তৈরি করতে কারিগরদের দরকার হয় বিশেষ ধরনের কাঠের তৈরি চাকা, মাটি ও কিছু ছোটখাটো যন্ত্রপাতি।

 

এই উপজেলার কুমার সম্প্রদায়রা যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে মাটির কলস, হাড়ি, সরা, থালা-বাসন, পেয়ালা, সুরাই, দইয়ের ভাঁড়, মটক ও পিঠে তৈরির ছাঁচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এখন পূর্ব পুরুষদের এ পেশাটিকে ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের। তবে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের তেমন কদর না থাকলেও দইয়ের ভাঁড়ের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

 

উপজেলার আমড়া গোহাইল গ্রামের নির্মলা রানী পাল বলেন, মাটি থেকে তৈরি সবধরনের জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। আমরা এখনো কিছু কিছু জিনিসপত্র তৈরি করি। তবে প্লাস্টিক কোম্পানিগুলো সবধরনের জিনিসপত্র তৈরি করলেও দইয়ের সরা ও ভাঁড়ের কোনো বিকল্প তৈরি করতে পারেনি।

 

এজন্য এখনো আমরা টিকে আছি। আর পূর্ব পুরুষদের এ পেশা ছাড়তেও পারি না। মাটির তৈরি এ জিনিসগুলো হাট-বাজারে বিক্রি করতে হয়। আর দইয়ের ভাঁড় ঘোষেরা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়।

 

ক্ষিতিশ চন্দ্র পাল বলেন, আগে মাটি কিনতে হয়নি। এখন মাটি, গুড়া ও খড়ি কিনতে হয়। মাটি ও জ্বালানির খরচ বেড়ে গেছে। আর পরিশ্রমের তুলনায় মাটির তৈরি জিনিসের দাম কমে গেছে। ১ কেজি ওজনের ১০০ পিস দইয়ের ভাঁড় ৪শ টাকা, ২ কেজি ওজনের ১০০ পিস দইয়ের ভাঁড় ৫০০ টাকা, বড় ১০০ পিস দইয়ের পাতিল ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়।

 

সরকারি কোনো সুবিধা আমরা পাই না। সরকারিভাবে আমাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে এ পেশা টিকে রাখা সম্ভব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version