-->
শিরোনাম

প্রভাবশালীর অত্যাচারে ৬ মাস বাড়ি ছাড়া ২ পরিবার

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রভাবশালীর অত্যাচারে ৬ মাস বাড়ি ছাড়া ২ পরিবার
সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট বাজারে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রভাবশালীর অত্যাচারে ছয় মাস বাড়ি ছাড়া ২টি পরিবার। বাড়িতে গেলেই বেধড়ক মারধরের শিকার ও উল্টো মিথ্যে মামলার আসামী হওয়ায় ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শিশু-বৃদ্ধসহ ১৫ জন মানুষ আত্মীয় স্বজনের আশ্রয়ে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার না পেয়ে ন্যায়বিচার পেতে তাই প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, মানবাধিকার সংগঠন ও মিডিয়ার সহযোগীতা কামনা করেছেন তারা।

 

মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট বাজারের জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন মসজিদের পাশেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের দূর্ভোগের কথা তুলে ধরেন।

 

তিনি বলেন, আমার বাড়ি পাশের খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ডাঙাপাড়ায়। এলাকার প্রধান সড়কের সাথেই আমার ও বড় ভাই মৃত আবেদ আলীর ঘর। আমাদের বাড়ির পিছনের বাড়ির লোকজনের চলাচলের পথ আমার জমি দিয়েই। এজন্য ৭ ফুট চওড়া ও ১৬০ ফুট দীর্ঘ রাস্তা করতে জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। অথচ আমাদেরসহ প্রতিবেশী প্রায় ৫ টি বাড়ির টিউবওয়েলের পানি নির্গমনের অসুবিধার কারণে দুই বছর আগে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরীর সহায়তায় সরকারীভাবে ড্রেন নির্মাণ করা হয়।

 

কিন্তু কিছুদিন পর মৃত মনসুর আলীর ছেলে দুলাল হোসেন ও হেলাল হোসেন অভিযোগ করেন যে ড্রেনের পানিতে দূর্গন্ধ। এতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে অজুহাতে একতরফাভাবে মাটি দিয়ে ড্রেন বন্ধ করে দেয় তারা। ফলে আমরা সমস্যায় পড়লে মেম্বার ও চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয়-ছয় ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়েই পানি নিষ্কাশন করা হবে। সে অনুযায়ী দীর্ঘ ১৬০ ফুট প্লাস্টিকের পাইপ কিনে পুঁততে গেলে বাধা দেয় দুলাল, হেলালরা।

 

এরই জের ধরে গত ২০২১ সালের আগস্টে তারা সংঘবদ্ধভাবে অতর্কিত হামলা করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। এতে আমার মৃত ভাই আবেদ আলীর বিধবা স্ত্রী সাবেদা বেওয়াসহ পরিবারের ৪ জন নারী জখম হয়। এই ঘটনায় পুলিশকে অভিযোগ দেয়ায় কয়েকদিন পর আবারও চড়াও হয় এবং আমাদেরকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেয় এবং উল্টো মামলা দেয়।এর কিছু দিন পরে নিজেদের বাড়িতে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে আরেকটি মামলা করে।

 

কিন্তু সত্যতা না পাওয়ায় পুলিশ একশনে না যাওয়ায় তারা আবার নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করে। এতে আমার ছেলে মিনহাজুল ইসলামকেও আসামী করে। অথচ মামলায় উলে¬খিত ঘটনার দিন সে এলাকায় ছিলনা। বরং ঢাকায় মিউচুয়াল ব্যাংকে কর্মরত ছিল। সর্বশেষ ছয়মাস আগে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছে। এভাবে একের পর এক মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে।

 

সাখাওয়াতের মেয়ে মনিজা বেগম বলেন, দুই ভাই চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় আছে। একমাত্র পুরুষ অভিভাবক আমার বাবাকে মেরে ফেলতে সবসময় অস্ত্র নিয়ে ওৎপেতে থাকে প্রতিপক্ষরা। কয়েকবার হামলাও করেছে। তাই প্রাণভয়ে আমার বড় বোনের বাড়িতে অবস্থান করেই ইমামতি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাড়িতে শুধু আমার মা ও বড় চাচী থাকতো।

 

কিন্তু সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ অবস্থায়। বাড়ি থেকে বের হওয়া সম্ভব ছিলনা। বাইরে থেকেও কেউ বাড়িতে ঢুকতে পারতনা। কয়েকদিন আগে তাদেরকেও অত্যাচারে রক্তারক্তি করে দুলাল গংরা। খবর পেয়ে আমি বাড়িতে গেলে আমাকেও অবরুদ্ধ করে ফেলে। তারা প্রায় ২০-৩০ জন দেশীয় অস্ত্র লাঠি নিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে রাখে সারা রাত।

 

এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করলেও কোন সুরাহা না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা চরম অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। তারা সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষসহ আইন সহায়তাকারী মানবাধিকার সংস্থা ও সংনাদকর্মীদের সহযোগীতায় ন্যায় বিচার দাবী করেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version