-->

কুমিল্লায় অপরিশোধিত পানি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লায় অপরিশোধিত পানি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা

কুমিল্লার বিভিন্ন বাজারে খোলামেলা বিক্রি হচ্ছে অপরিশোধিত পানি। লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফিল্টারিং না করে নিয়মবহিভর্‚তভাবে অপরিশোধিত পানি বিক্রি হচ্ছে।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলার দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএসটিআই, পরিবেশ ও শ্রম দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কোনোরকম অনুমতিপত্র কিংবা প্রত্যয়নপত্র না নিয়েই প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ এ পানির ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তার ওপর এ অঞ্চলে রয়েছে লাকসাম পৌরশহরে ৬-৭টি পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

 

এ ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির বিশুদ্ধ পানির নামে বোতল, জার ও ক্যান তো আছেই। কোনো কোনো পানি তৈরি প্রতিষ্ঠান টিউবওয়েল থেকে প্লাস্টিকের জারে পানি ভর্তি করে আর্সেনিকমুক্ত ও বিশুদ্ধ পানির নামে সরবরাহ করছেন এলাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

 

সূত্রগুলো আরো জানায়, বিএসটিআই অনুমোদন নিতে হলে আইএসও গাইড-৬৫ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান পানি ভর্তি ও জার পরিষ্কারে স্বয়ংক্রিয় মেশিন সংরক্ষিত, কেমিস্ট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে কারখানার ল্যাবরেটরি স্থাপন ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম বাধ্যতামূলক।

 

এ অঞ্চলে প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে আর্সেনিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৭০টি গ্রাম আর্সেনিকের উপস্থিতির জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে এলাকার প্রায় ৯৮ ভাগ টিউবওয়েল আর্সেনিকযুক্ত এবং প্রায় ৫৬ ভাগ টিউবওয়েল মলযুক্ত। এ পর্যন্ত লাকসামে ২৬ হাজার ও মনোহরগঞ্জে প্রায় ৩৫ হাজার, বরুড়ায় ১৫ হাজার, সদর দক্ষিণে ১৮ হাজার, লালমাইতে ১১ হাজার ও নাঙ্গলকোটে প্রায় ২০ হাজার লোকের ওপর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা আর্সেনিক গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ করে চলেছে।

 

জেলা দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক বেসরকারি সংস্থার সূত্র জানায়, জেলা-উপজেলা দক্ষিণাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত লাকসামে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ও মনোহরগঞ্জে প্রায় চার হাজার, বরুড়ায় সাড়ে তিন হাজার, সদর দক্ষিণে তিন হাজার ৮শ, লালমাইতে দুই হাজার একশ ও নাঙ্গলকোটে প্রায় চার হাজার দুইশ আর্সেনিক রোগী শনাক্ত করতে পেরেছে।

 

স্থানীয় একাধিক পরিবেশবিদ জানান, ওইসব পানি তৈরি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার খপ্পরে পড়ে ভোক্তারাও পানির গুণগতমান বিচার ছাড়াই সেসব ফ্লিটার পানিকে বিশুদ্ধ পানি ভেবে পান করে চলেছে। এ ছাড়া ওইসব প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর প্রত্যয়নপত্র, কারখানা লে-আউট, প্রোসেস ফ্লো-চার্ট, কারখানা স্থাপিত যন্ত্রপাতির তালিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন-বৃত্তান্ত, স্বাস্থ্য সনদ, পরিবেশ সনদ, শ্রম মন্ত্রণালয় সনদ, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, প্রিমিসেস সনদ, বিডিএস ও মোড়কজাতকরণ বিধিমালা বাধ্যতামূলক থাকলেও মালিকরা তা মানছে না। স্থানীয় সব মহলকে ম্যানেজ করেই তাদের এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের।

 

স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বোর্ডের একাধিক সদস্য জানায়, ওইসব প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই বিএসটিআই ছাড়পত্রসহ সংশ্লিষ্ট নিয়মে কাগজপত্র বাধ্যতামূলক। সংস্থার অধ্যাদেশ-৩৭/৮৫ এর ২৪ ধারা মতে, পানিসহ প্রত্যেক পণ্যের ছাড়পত্র নিতে হবে এবং পানি বাজারজাতকরণে সংস্থার সিএম সনদ জরুরি। অপরদিকে প্রতি লিটার পানিতে উপাদান থাকতে হবে পিএইচ ৬.৪ থেকে ৭.৪, টিডিএস-২৬০ মিলিগ্রাম, ক্যাডসিয়াম .০০৩, লেড .০১, ক্লোরাইড-২৫০, নাইট্রেড ৩.৫ এবং আর্সেনিক ও সায়ালাইড গ্রহণযোগ্য নয় বিধান থাকলেও তাদের কাছে এসব মূল্যহীন।

 

অন্যদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি লিটার পানিতে গ্রহণযোগ্য উপাদানগুলো হলো আর্সেনিক ০.০৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৫, ক্লোরাইড-২০০, ক্যাডসিয়াম-০.০০৫, কপার-১, ক্লোরাইড-১, আয়রন ০.১-০.৩, লেড-০.০৫, মার্কারি-০.০০১, ম্যাগনেসিয়াম ৩০-৫০, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৫, নাইট্রেড ১০.৪৫, পিএই ৭-৮.৫, সালফেট-২০০.০০, টিডিএস ৫০০, টোটাল হার্ডনেস ১০০ এবং জিংক ৫ মিলিগ্রাম।

 

এ ছাড়া ওই পানি তৈরিতে ক্ষতিকারক নাইট্রেড, আর্সেনিক ও সায়ালাইড শোধন করা হয় না। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি এবং দক্ষ জনবল না থাকলে সে পানি কখনোই বিশুদ্ধ হবে না। এমনকি পানি জীবাণুমুক্ত হলেও পানির লেড, আয়রন, ফ্লোরাইড ও আর্সেনিকের মান সঠিকভাবে নির্ণয় করার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তা অনুপস্থিত।

 

এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version