চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার নামে খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল। বাংলাদেশের আড়াইদিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো ২ হাজার ৪০০ হেক্টরের বেশি আবাদি জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই গুমাইবিল। উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতিতে গুমাইবিলের রয়েছে গুরুত্ব। সম্প্রতি গুমাইবিলে বাড়িঘর, দোকানপাটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই প্রবণতাকে রোধ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গুমাইবিলে অবৈধ কোনো স্থাপনা করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাতন্ত্র আইনের মাধ্যমে গুমাইবিল রক্ষার্থে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়। বিলের বিভিন্ন স্থানে গণবিজ্ঞপ্তি আকারে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়নসহ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত গুমাইবিলের বিস্তৃতি।
বুধবার সকালে শস্যভান্ডার রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, সমগ্র গুমাইবিলে শ্রেণি পরিবর্তন করে কোনো স্থাপনা না করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। জমির বিভিন্ন পয়েন্টে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর উদ্যোগে সাইনবোর্ড আকারে টাঙানো হয়েছে এসব গণবিজ্ঞপ্তি।
সম্প্রতি বিভিন্ন দখলদাররা গুমাইবিলের ফসলি জমির মাটি কাটা, অবৈধ স্থাপনা ও গুমাইবিল ছোট করার পায়তারা করে। এতে রাঙ্গুনিয়াবাসী ও সচেতন নাগরিক গুমাইবিল রক্ষার্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের ঝড় তোলে। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান এবং গুমাইবিলে ফসলি জমির টপ সয়েল কাটার দায়ে অর্থদÐ করেন প্রশাসন।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব নু-এমং মার্মা মং এর নেতৃত্বে গুমাই বিলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গত ২ মাসে দখলদারদের প্রায় ৩টি বসতঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী।
তবে প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেও ভূমিদস্যুরা বিভিন্নভাবে গুমাইবিলে স্থাপনা গড়ার চেষ্টা চালালে উপজেলা প্রশাসন রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত আইনে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সাইনবোর্ড স্থাপন করে হুঁশিয়ারি দেয় দখলদারদের।
গণবিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জামশেদুল আলম জানান, চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার নামে খ্যাত গুমাইবিল রাঙ্গুনিয়ার সম্পদ। তাই গুমাইবিল রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১ এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত আইন ১৯৫০ অনুযায়ী শ্রেণি পরিবর্তন করতে জেলা প্রশাসকের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন।
যেহেতু গুমাই বিলের জমি নাল শ্রেণির তাই আইনত এ শ্রেণি অপরিবর্তনীয় রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। ফসলের আবাদ বাড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসন রয়েছে। তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনায় গুমাই বিল রক্ষায় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জামশেদুল আলম আরও বলেন, প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থানে সাধারণ কৃষক ও রাঙ্গুনিয়াবাসী সম্পৃক্ত হয়ে আন্দোলন হিসেব দেখতে চান। সমগ্র গুমাইবিলে শ্রেণি পরিবর্তন করে গুমাই বিলে কোন স্থাপনা না করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছে। এবং মাইকিং করে তা সকলকে জানিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব মোহাম্মদ জামশেদুল আলম।
এদিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জামশেদুল আলমের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গুমাইবিলের সাধারণ কৃষকেরা। সালেহ আহমেদ নামে গুমাইবিলের এক কৃষক বলেন, কুড়ি বছর ধরে গুমাইবিলে চাষাবাদ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা এসে গুমাইবিলে বিভিন্ন দোকানপাট ও মাটি কেটে নিয়ে যাওয়াতে আমরা শঙ্কায় ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, দেখেছি প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা বন্ধে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এতে আমরা কৃষকরা খুশি। এই বিল থেকে উৎপাদিত ধান বাংলাদেশের আড়াইদিনের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে। গুমাইবিল বাঁচলে আমরা কৃষকরা বাঁচি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য