-->
শিরোনাম

নদী থেকে অবাধে উত্তোলন হচ্ছে বালু

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
নদী থেকে অবাধে উত্তোলন হচ্ছে বালু
এভাবেই অবাধে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু

ভোলার চরফ্যাশনে বালু উত্তোলনের ইজারা না থাকলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মেঘনা ও তেঁতুলীয়া নদী থেকে অবাধে উত্তোলন হচ্ছে বালু।

 

অসাধু একাধিক চক্রের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ড্রেজার মেশিন বন্ধে প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় নদী ভাঙন কবলীত মেঘনা ও তেঁতুলীয় ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের মুখে পড়েছে শহর রক্ষাবাধ, কৃষকের ফসলী জমি ও ভিটে বাড়ি। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনের গৃহহারা হয়ে পড়েছে মেঘনা ও তেঁতুলীয়া নদী পাড়ে কয়েক হাজার মানুষ।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেঘনা ও তেঁতুলীয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০ থেকে ১২ টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে উত্তোলন হচ্ছে বালু। ড্রেজার সম্মলিত ছোট বল্কহেড দিয়ে নদী থেকে বালু কেটে ওই বালু বড় বল্কহেডে লোড করা হয়। অবৈধভাবে উত্তোলনের বালু নিতে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় দাবিয়ে বেড়াচ্ছে ১৫ টি বল্কহেড। ড্রেজার মালিক ও বল্কহেড মালিকদের সাথে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের চুক্তি অনুযায়ী ৮ থেকে ১০ হাজার ঘনফুট বালু ধারন ক্ষমতার জাহাজে লোড করা বালু ৩ টাকা ফুট দরে তীরে এনে জাহাজ থেকে খালস করে দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নদী থেকে উত্তোলন করা বালুর স্তুুপ করে রাখেন মেঘনা ও তেঁতুলীয়া পাড়ের বাধের ঢালে। ট্রাক ভর্তি করে বিক্রি করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ গ্রামগঞ্জের আনাচে কানাছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বালুখেকো বল্কহেড ও ড্রেজার মালিক সাহিন মহাজন, তাজুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, আকতার হোসেন, নাসির, নোমান খা, মনির ও বেলালসহ কয়েকজনের একটি চক্র অবাধে মেঘনা ও তেঁতুলীয়া থেকে বালু উত্তোলন করে চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের কাছে ৩ টাকা ফুট দরে তীরে পৌঁছে দেন ড্রেজার মালিক ও বল্কহেড মালিকরা। ওই বালু খুরচা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা।

 

ভোলা জেলা প্রাশাসকের কার্যালয় সুত্রে জানাযায়, চরফ্যাশন উপজেলায় কোন বালু মহাল না থাকায় ড্রেজার মালিক বা কোন ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানকে মেঘনা ও তেঁতুলীয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি।

 

অথচ চরফ্যাশন উপজেলার বালুখেকো ডেজ্রার ও বল্কহেড (জাহাজ) মালিকরা প্রশাসনের সাথে আতঁত করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মেঘনা ও তেঁতুলীয়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ড্রেজার মালিক ও শ্রমিকরা জানান, নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু কেটে বল্কহেড ভর্তি করে তীরে এনে চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়ীদের কাছে খালাস করে দেন তারা । এতে তাদের ৮ থেকে ১০ হাজার ঘনফুট ধারনক্ষমতা সম্পন্ন এক বল্কহেড বালু উত্তোলনে খরচ হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের চুক্তি অনুযায়ী উত্তোলন করা ওই বালু ৩ টাকা ফুট দরে তীরে পৌঁছে দেন। এতে তাদের প্রতি ট্রিপে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ৫ হাজার টাকা। ওই লাভ্যাংশ থেকে ড্রেজার ও বল্কহেড মালিক সমিতির নেতারা প্রশাসন ম্যানেজের নামে ট্রিপ প্রতি কিছু টাকা নিয়ে নেন। বালু উত্তোলন করতে গিয়ে প্রশাসনের ঝামেলা এড়াতে সকল দ্বায়িত্ব ড্রেজার ও জাহাজ মালিক সমিতির।

 

নদী ভাঙন কবলিত বাসিন্ধা আবদুল খালেকসহ অনেকে জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারী না থাকায় মেঘনা ও তেঁতুলীয়া নদীতে অবৈধভাবে উত্তোলন হচ্ছে বালু। এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনের গৃহহারা হয়েছে চরফ্যাসনের আসলামপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ ও দুলারহাট থানার তেঁতুলীয়া কোল ঘেষে গড়ে উঠা নীলকমল ইউনিয়ন ও মুজিব নগর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

 

বালু ব্যবসায়ী আবু তাহের দলু খন্দকার জানান, ড্রেজার ও বল্কহেড মালিকদের কাছ থেকে উত্তোলন করা বালু তারা ক্রয় করে বিক্রি করছেন। জাহাজ প্রতি বালু নদীর পাড়ে ৩ টাকা ও ব্যবসায়ীদের বালুর মাঠে পৌঁছে দিলে সাড়ে ৩ টাকা দর হারে টাকা দিতে হয়। তারা ড্রেজার ও বল্কহেড মালিকদের কাছ থেকে কিনে খুরচা ও পাইকারী দরে বিক্রি করছেন।

 

ড্রেজার ও বল্কহেড মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. শাহিন মহাজন জানান, সরকারী ভাবে বালু মহাল বা উত্তোলনের ইজারা না দেয়ায় স্থানীয়দের প্রয়োজনে তারা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সরবারহ করছেন। বালু না হলে চরফ্যাসনের অবকাঠামো উন্নয়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হতো।

 

চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ডে ডিভিশন- ২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, নদী ভাঙন কবলিত নিকটবর্তী এলাকা থেকে বিালু উত্তোলনের কোন বৈধতা নেই। তবে নদী ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে দুরে বালু উত্তোলন হলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা না তবুও ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন যাতে না হয় সেজন্য সার্বক্ষিণক আমাদের নজরদারী রয়েছে।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল নোমান জানান, চরফ্যাশনের মেঘনা ও তেঁতুলীয়া নদীতে বালু উত্তোলন বা বালু মহলের কোন ইজারা দেয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রæত অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version