-->
শিরোনাম

ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

হুমায়ুন রশিদ জুয়েল, কিশোরগঞ্জ
ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

হুমায়ুন রশিদ জুয়েল, কিশোরগঞ্জ: গ্রাহকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নয়ন করা হবে এমন লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনার সাড়ে ৪ হাজার গ্রাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা কথিত এনজিও ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন। হাওরে সহজ-সরল কৃষককে বিনা সুদে ঋণ, তাদের সন্তানদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়া; এমনকি মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরি করে দেয়া হবে এমন অনেক মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে ১৫০ টাকা নিয়ে সদস্য করত কথিত এনজিও ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন।

 

সদস্য করার পর শুরু হয় প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে সঞ্চয় জমা নেয়া। এখানেও প্রলোভন দেখানো হয়েছে যারা এক বছর ৫০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করবে তাদের কে বিনা সুদে প্রয়োজনসাপেক্ষে ঋণ দেয়া হবে।

 

ইটনা উপজেলায় কথিত শাখা ম্যানেজার একজন এবং প্রতি ইউনিয়নে একজন করে মাঠকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি পেয়ে গ্রামের সহজ-সরল মহিলাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রলোভন দেখানো শুরু করে ম্যানেজারসহ মাঠকর্মীরা। তাদের প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে সদস্য হয়ে সঞ্চয় দেন মহিলারা।

 

ইটনা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনোআরা বলেন, প্রথমে বলছে এটা মানবিক সমিতির মতো হবে, বাজারের পাশে পাঁচতলা একটা বিল্ডিং করবে তারপর বাজারে সব মালামাল অর্ধেক দামে বিক্রি করবে, ডাক্তার দেবে, সহযোগিতা দিবে, ছয় মাস মেয়াদি বিনা সুদে ঋণ দেবে। সদস্য হওয়ার পর কিছু সদস্যকে ১০টা ছোট হাঁসের বাচ্চা দিয়েছিল তখনো ২০ টাকা করে নিছে।

 

এখন উনাদের অফিস বন্ধ, কাউকে পাই না, ম্যানেজার বাহার মিয়ারে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে আমরা বাহারকে দেখেই সদস্য হয়েছি। আমরা এখন টাকা ফেরত চাই, বিচার চাই। ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশনের আরেকজন সদস্য জয়নাব বেগম বলেন, অর্ধেক দামে জিনিস দিবে, চাকরি দিবে, ভালো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে দিবে এমন অনেক লোভনীয় ও ভুয়া কথা বলেছে এখন কিছুই পাই না, আমাদের টাকা ফেরত চাই।

 

সদস্য জহুরা বেগম বলেন, তারা বলেছিল, আপনারা এটার মধ্যে সদস্য হন আপনাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেব এখন আর কোনো খবর নেই, আমরা এটার সঠিক বিচার চাই, আর যেন এমনভাবে কেউ প্রতারিত না হয়। সদস্য চায় না আক্তার বলেন, অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিছে, কিন্তু ২ বছরের মধ্যে আজ পর্যন্ত কিছুই পাইলাম না, তাদের কোনো খোঁজখবর নেই। এ বিষয়ে ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন ইটনা শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মো. বাহাউদ্দিন বাহার জানায়, আমাকে নিয়োগ দিয়েছিল।

 

আমি অফিসের নিয়মানুযায়ী, সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম এবং সব টাকা অফিসে জমা দিয়েছি। আমি জয়েন করার ৫-৬ মাস পর চাকরি ছেড়ে দিছি। এখন তাদের অফিস বন্ধ, ভাড়াও বাকি আছে। ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন ইটনা শাখার বর্তমান ম্যানেজার মো. জামাল হোসেন বলেন, আমাকে মাঠকর্মী থেকে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ৭ মাস ধরে অফিস বন্ধ, এদিন-সেদিন আসবে বলে দিন যাচ্ছে। ইটনা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার সদস্য রয়েছে।

 

ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন ইটনা শাখার তথ্যমতে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সাড়ে ৪ হাজার সদস্য। ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশন সদস্য ফরম থেকে টাকা পেয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আবার গড়ে প্রতি সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় নিয়েছে ৮০০ টাকা করে, তাহলে মোট সঞ্চয় নিয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে টাকা নিয়েছে ৪২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

 

এছাড়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রলোভন দেখিয়ে আলাদাভাবে প্রায় ৫-৭ লাখ টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কায়সার আহমেদ পলাশের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অফিসাল কাজে ঢাকায় ব্যস্ত আছি, কিছুদিন পর মিঠামইন অফিসে গিয়ে কথা বলার জন্য। গ্রাহকের সব অভিযোগ অস্বীকার করেই ফোন কেটে দেয়। আর ফোন রিসিভ করেননি।

 

ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিসা আক্তার বরাবরও ইম্পারশিয়াল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বলেন জানান ইউএনও ইটনা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version