-->
পর্যটকদের বাড়তি বিনোদন

কক্সবাজারে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার
কক্সবাজারে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা
কক্সবাজারে শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় রাতের আলোয় আলোকিত পরিবেশে মুগ্ধ আগত দর্শক ও পর্যটক

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার:  এবার পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে শুরু হয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সু উচ্চ পাহাড়, পাহাড়ীঝর্ণা, সমুদ্রের নীলাজল, পিচঢালা নান্দনিক মেরিন ড্রাইভ সড়ক, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাথুরে বীচ ইনানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারীপার্কসহ অসংখ্য পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র দেশী বিদেশি পর্যটকের বিমোহিত করছে।

 

কি নেই এখানে? এসব কিছু দেখতে ও প্রকৃতিকে কাছে থেকে উপভোগ করতে অবিরাম ছুটে আসছে কক্সবাজারে দৈনন্দিন লাখো পর্যটক। কেউ দলবেঁধে, কেউ একা আবার কেউ আসছে পরিবার পরিজন নিয়ে। তারপর ও রাতের কক্সবাজার থাকে নীরব নিস্তব্ধ। হোটেলের চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকতে হয় পর্যটকদের।

 

সেই নিস্তব্ধতার গ্যাড়াকল থেকে পর্যটকদের আনাগোনায় মূখরিত করতে প্রতিবছর প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় চেম্বার অফ কমার্সসহ একাধিক সংগঠন মিলে আয়োজনের মাধ্যমে পুরো মৌসুম জুড়ে চলছে শিল্প ও বানিজ্যমেলা।

 

রাতের কক্সবাজারকে আলোকিত করে পর্যটকসহ স্থানীয়দের বাড়তি বিনোদনের একমাত্র ঠিকানা হয়ে উঠেছে এই মেলা। তাই রাতের বিনোদনে কোনো স্থায়ী আয়োজন এখনো হয়ে ওঠেনি। নেই বিদেশিদের জন্য এসক্লোসিভ জোন।

 

কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্যমেলা স্থানীয় ভ্রমণপিয়াসী ও আগত পর্যটকদের রাতের বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঝাউবাগান ঘেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠে চলমান শিল্প ও বাণিজ্যমেলায় গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটাসহ নানা বিনোদনে নারী, পুরুষ ও শিশুদের উচ্ছাসে মুখরিত থাকে মেলাঙ্গন।

 

ঢাকা থেকে শিমুল মুখার্জি এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে কক্সবাজার। সারাদিন বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে ও তাদের মন ভরেনি। সন্ধারপর সবাই কে নিয়ে ছুটে আসেন মেলায়। শিমুল বলেন, এটা-সেটা কেনাকাটা, বিভিন্ন রাইডে চড়া, খাওয়ার মধ্যে কখন যে তিন ঘণ্টা কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।

 

দুপুরের পর স্থানীয়দের আনাগোনায় মূখর থাকে মেলা প্রাঙ্গন। মেলায় আসা শিক্ষার্থী তোসার অনি, মুক্তা সানি রাহেলা, রিয়াজ, কুসুম জানান, নৌকা, দোলনা, নাগরদোলা, ফাইভার ইলেকট্রিক চর্কি ও মিনি হাতি-ঘোড়ায় চড়ে প্রচুর আনন্দ পেয়েছি। দেখেছি জাদু প্রদর্শনীও।

 

শিশুদের বিনোদনের জন্য মেট্রোরেলসহ ওয়াটার স্পিডবোট, জাম্পিং বেলুন, ওয়াটার বলে শিশুদের নিয়ে ভিড় করেছেন মায়েরা। নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের স্বাদ নিচ্ছেন সবাই।

 

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখি প্রবেশ মুখেই স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। রয়েছে আলোকসজ্জাসহ সুউচ্চ টাওয়ার। বসানো হয়েছে ফায়ার ইউনিটি ও মেডিকেল টিম। ধুলা-বালি কমাতে পুরো মাঠে ইট বিছানোর পাশাপাশি আলোকসজ্জায় ঝলমলে করা হয়েছে চারপাশ। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়।

 

মেলা আয়োজক কমিটির কো-চেয়ারম্যান শাহেদ আলী সাহেদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও মেলাটি ব্যতিক্রম ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হয়েছে। রয়েছে বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা। মেলায় বসেছে শতাধিক স্টল ও একাধিক মুখরোচক খাবারের দোকান। মেলায় অংশ নেওয়া প্যাভিলিয়ন ও সাধারণ স্টলগুলোতে প্রসিদ্ধ গার্মেন্টস, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্পজাত, পাটজাত, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টক, পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি ও ফার্নিচারের সমাহার।

 

মেলায় দেশীয় ব্র্যান্ড প্রাণ-আরএফএল, এসিআই, দেশি-বিদেশি কার্পেট, জামদানি ও রাজশাহী সিল্ক শাড়ির প্যাভিলিয়নও রয়েছে। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল এসোশিয়েসনের সভাপতি মুখিমখান বলেন, পর্যটনে রাতের বিনোদনে স্থায়ী কিছু এখনো গড়ে ওঠেনি। কিন্তু গত দুই মাস ধরে বাণিজ্যমেলাটিই রাতে পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের বিনোদন অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এনিয়ে পরিবারসহ বেড়াতে আসা দূরদূরান্তের পর্যটকরাও খুশি।

 

মেলা আয়োজক কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, মেলায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় রয়ে চারপাশে ও ভেতরে সিসিটিভি। রয়েছে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলাস্থলে সব ধরনের হকার ও ভিক্ষুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফুডকোটে অনিয়ম রুখতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মূল্য তালিকা। ইভটিজিং রোধে মেলায় রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। আরও মাসখানেক চলবে মেলার কার্যক্রম।

 

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মেলার সিসি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে দায়িত্বরত পুলিশ। ইভটিজিংসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। মেলায় স্থানীয় ছাড়াও বিদেশি ক্রেতা ও পর্যটক অংশ নিচ্ছেন, এটা যেমন আনন্দের, আর এই মেলা চলে বলেই পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা ও আনন্দে উদ্বেলিত থাকে।

 

কক্সবাজারের প্রবীন আইনজীবী হাবিবুর রহমান বলেন, এক সময় কক্সবাজারে জমজমাট নাচ গান ও জোয়ার আসর বসতো। চলতো কয়েকমাস। উলঙ্গ নিত্যসহ নানা অসমাজিক কর্মকান্ড। এখন দিন বদলেছে, মানুষ অশ্লীল, বেহায়া বেল্লাপনা থেকে সরে এসেছে। সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চায় চলছে শিল্প ও বানিজ্যমেলা। তাই এই মেলা যতই দীর্ঘায়িত হোক মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version