বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বরুরিয়ায় ৮০ শতাংশ ক্ষেতের ফুলকপি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক রিয়াজ উদ্দিনসহ অনেক চাষি। সময় পেরিয়ে গেলেও আশানুরুপ দামে বিক্রি হয়নি কৃষকের ক্ষেতের ফুলকপি। অনেক কৃষকের ফুলকপি এখন ক্ষেতের ভেতরেই নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষেতের ফুলকপি গাছে অজ্ঞাত রোগের থাবায় পেকে-পচে যাচ্ছে।
এর ফলে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় এখন এলাকার অনেক কৃষক। ৬৭০ জাতের ফুলকপি চাষ করে ভালো দামে বিক্রি না হওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে তাদের। দেশি কোম্পানির দেশি জাতের বীজের ফুলকপির চারা চাষ করেছিলেন তারা। কিন্তু বাজারে কাক্সিক্ষত মূল্য না থাকায় তাদের ফুলকপি তেমন বিক্রি হয়নি।
চাষিদের অভিযোগ, গত বছর এই উপজেলায় ফুলকপির আবাদ কম হয়েছিল। বাড়তি লাভের আশায় এবার ব্যাপক আবাদ করেন চাষিরা। বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে অনেকে নেমেছেন মাঠে। অনেকেই ঋণ নিয়ে শুরু করেন চাষ। আগে-ভাগেই লাগানো হয়েছিল চারা। এখন ফুলকপিতে লাভ তো দূরের কথা ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
উপজেলার বরুরিয়া গ্রামের কৃষক রিয়াজ উদ্দিন অশ্রু সিক্ত নয়নে ভোরের আকাশের প্রতিনিধিকে বলেন, নিজের ৮০ শতাংশ জমিতে সুদি-ঋণ করে ৬০ হাজার টাকা এনে ক্ষেতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। বাজারে ফুলকপির ভালো দাম না থাকায় এখন মাথায় হাত। স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী জামাল ও রাসেল ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষেতের সব ফুলকপি ক্রয় করতে চেয়েছিল।
বাজারে কপির দাম কম হওয়ায় পড়ে তাড়া আর ফুলকপি নেয়নি। প্রথমে তারা ক্ষেতের ফুলকপি বাবদ ১০ হাজার টাকা বায়না দিয়েছিল। এখন ৬০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে রাতের ঘুম হারাম।
তিনি আরো বলেন, আমার কৃষক পরিবারে জন্ম। পিতার মৃত্যুর পর সংসারে দরিদ্রতার অভাবে কিশোর বেলা থেকে অনেক বছর অন্যের বাড়িতে রাখাল হিসেবে কাজ করেছি। বাড়িতে খাবারের জন্য সংরক্ষণে রাখা কিছু ধান ছিল সেটা বিক্রি করে সুদের ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এলাকার মানুষের খাবারের জন্য বিনামূল্যে কপি বিলি করছি। গরুতেও খাচ্ছে না ফুলকপি। সামনে ধান চাষের সুযোগ আছে। কিন্তু পুঁজি না থাকায় ধান চাষেও নামতে পারছি না। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
বরুরিয়া গ্রামের আরেক ফুলকপি চাষি জাহিদ উদ্দিন জানান, তার ৯০ শতাংশ জমিত ফুলকপি চাষ করেছিলেন। বাজার গুলোতে কপির দাম সস্তা হওয়া ক্ষেতের সব কপি বিক্রি হয়নি। খেতেই নষ্ট হচ্ছে কষ্টের আবাদি ফুলকপি। এবছর কপি চাষ করে ক্ষতির থাবার মুখে পড়েছি। শুধু কৃষক রিয়াজ উদ্দিন নন, তার মতো এলাকার অনেক চাষির একই দশা। ক্ষতিগ্রস্ত ফুলকপি চাষিগণ তাদের ক্ষতিপূরণে কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, এবছর উপজেলায় ফুলকপি-বাধাকপির ভালো উৎপাদন হয়েছে। কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সকল প্রকার সহযোগিতা ও পরামর্শে কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। হয়তো ফুলকপি বেশি উৎপাদনের ফলে চাহিদা কম হওয়ায় চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। পাশাপাশি ফুলকপি ক্ষেতে কোন রোগ বালাই আক্রান্ত করলে তা প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য