-->
শিরোনাম

পর্যটকের দখলে কক্সবাজার, পাঁচ দিনে হাজার কোটি টাকার টার্গেট

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার
পর্যটকের দখলে কক্সবাজার, পাঁচ দিনে হাজার কোটি টাকার টার্গেট

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার: ঋতুরাজ বসন্তে পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার। শীতের তীব্রতা হ্রাস পেয়ে বেড়েছে পর্যটক। হোটেলে রুম না পেয়ে ফিরে গেছে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পর্যটক। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্র, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া ও ১৮ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রী, ১৯ ফেব্রুয়ারি শবেমেরাজ, মাত্র এক দিন পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি- সব মিলিয়ে অঘোষিতভাবে পাঁচ দিনের ছুটিতে পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার।

 

বর্তমানে কক্সবাজারে আড়াই লাখ পর্যটক অবস্থান করছেন। কোনো কোনো হোটেলে ৮-১০ জন করে উঠেছে প্রতিটি কক্ষে। তাই নাতিশীতোষ্ণ আরামদায়ক এ সময়কে বেছে নিয়েছেন বেশির ভাগ পর্যটক। ৭টি জাহাজে করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার পর্যটক। কোথায়ও নিরাপত্তার কোনো কোনো ঘাটতি নেই। পর্যটন মৌসুমের শেষ কয়েক দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করছেন পর্যটকরা। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ভিড় জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। সব মিলিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে পর্যটকের তিলধারণের জায়গা নেই।

 

শুক্র-শনিবার তো আছেই। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে কোনো হোটেল মোটেল খালি নেই। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন এই পাঁচ দিন গড়ে দুই লাখ পর্যটক থাকবে কক্সবাজারে। ফলে এ পাঁচ দিনে পর্যটন খাতে কম করে হলেও এক হাজার ১০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা হতে পারে। দশ লাখ পর্যটক প্রতিজন মাত্র ১০ হাজার টাকা ব্যয় করলে ও দিন শেষে পাঁচ দিনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০ কোটি টাকা। কোনো কোনো পর্যটক দৈনিক ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে থাকেন। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও ইনানী, হিমছড়ি, পাটোয়ারটেক, সেন্টমার্টিন, রামু বৌদ্ধমন্দির, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কসহ পাশর্^বর্তী পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে আসতে মাথাপিছু ৮-১০ হাজার টাকার কম খরচ হবে না।

 

অর্থনীতিবিদ প্রফেসর সুকুমার দত্তের দেয়া তথ্যানুযায়ী পর্যটকেরা এখানে আসেন দুই হাত খুলে খরচ করতে। দেখতে চায় নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর চায় নিরাপদ পরিবেশ। তিনি আরো বলেন, নিরাপদ পরিবেশ অনেকটা নিশ্চিত হলে ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক্সক্লোসিভ ট্যুরিস্টজোন এখনো তৈরি হয়নি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সেন্ট মার্টিনেও এবার আগাম কিছু বুকিং পেয়েছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।

 

গতকাল বিকেলে কক্সবাজার শহরের ডলফিন মোড়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত শত শত পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও তারা রুম পাননি। সোবহান, নোমান, সাহেলী, রুমা ও আনোয়ার নামের পর্যটকেরা বলেন, ‘আমরা রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখি কোনো হোটেলে রুম নেই।’

 

ঢাকা নবাবপুর থেকে আসা রাফেয়া ও তার স্বামী নওশেদ বলেন, ‘সকালে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর শালিক নামক একটি রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করেছি। এরপর রুম খুঁজতে গিয়ে দেখি কোথায়ও রুম খালী নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কলাতলীতেই একটি অভিজাত হোটেলে রুম পেয়ে যাই, আমরা ছিলাম ২৫ জন কিন্তু রুম পাওয়া গেল মাত্র ৫টা। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ওই পাঁচ রুমেই আমরা দুই রাতের জন্য থেকে গেলাম। তবে দাম ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশি। এতে কি? কোনোমতে থাকতে পারাটাই যে আসল কাজ। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম এ দুই দিন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পাশর্^বর্তী পর্যটনকেন্দ্রগুলো দেখব। এরপর চলে যাব সেন্টমার্টিন। সেখান থেকে ফিরে সোজা ঢাকার বাস ধরব।

 

কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘সব হোটেলে রুম ৮৫-৯০ বুকিং আছে। আপদকালীন ১০ শতাংশ রুম খালি আছে। সব এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য আসছেন। অনেককে না করতে হয়েছে।

 

সাপ্তাহিক ছুটিকে ঘিরে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় আড়াই লাখ পর্যটক। অথচ প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেলে দেড় থেকে এক লাখ ৭০ হাজার পর্যটক ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। শহরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। এ সম্পর্কে টুয়াকের উপদেষ্টা মফিজুর রহমান বলেন, সব ট্যুরিস্ট স্পট এখন কানায় কানায় ভরপুর। ‘ছুটিতে কক্সবাজারের হোটেলের সব বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অনলাইনে রুম চাইলেও তাদের দেয়া যাচ্ছে না।

 

বর্তমানে দুই লাখের বেশি পর্যটক রয়েছে। কমপক্ষে চার হাজার পর্যটক গতকাল সেন্ট মার্টিন গেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোয় তাদের সদস্যরা তৎপর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের সুপার মো. জিল্লুর রহমান।

 

কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের সভাপতি, মুখিম খাঁন বলেন, আমরা মৌসুমের শেষপ্রান্তে চলে এসেছি, এ সময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে সাপ্তাহিক, ঐচ্ছিক ও সরকারি ছুটি না থাকলেও মোটামুটি পর্যটক থাকে আশানুরূপ। তবে এ বছর এ সময়ে অন্যান্য যেকোনো বছরের তুলনায় পর্যটক বেশি। এতে আমরা সন্তুষ্ট। একদিকে সেবা দিতে পারছি অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।

 

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ মালিক ও পরিচালক সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, আমরা দেরিতে অনুমতি পেয়েছি। যে কারণে এখনো আমরা লোকসানে আছি। তারপর প্রতিদিন কোনো জাহাজ খালি যাচ্ছে না। আমাদের টার্গেট প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে মার্চ পর্যন্ত জাহাজ চালাতে পারলে লোকসান কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখব। তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিনের পাশাপাশি সোনাদিয়াতে পর্যটক বহন করার জন্য কাঠের তৈরি অত্যাধুনিক বিশাল বোট নামাবেন খুব শিগগিরই।

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছি। যেখানে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।’

 

শীত শেষ হয়ে আসায় মৌসুমে অন্তিম সময় পর্যটকরা কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে মাঠে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মুহম্মদ শাহিন ইমরান।

 

তিনি বলেন, সব পর্যটক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বলে দেয়া হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই পর্যটক হয়রানি হয় এমন আচরণ সহ্য করা হবে না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version