খালেদ আহমদ, সিলেট: সুনামগঞ্জের বোরো ফসল নিয়ে এবারো চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা-হতাশা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মধ্যে। বোর ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে নির্ধারিত সময় বাকি আছে মাত্র ১০ দিন কিন্তু হাওরের অর্ধেক বাঁধের কাজও শেষ হয়নি। চলছে ছলছাতুরী ও বাঁধের কসমেটিকস সার্জারি। কাজের অগ্রগতি খুবই হতাশাজনক বলে বানিয়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা। এবারো বাঁধের ২০০ কোট টাকা আর শত কোটি টাকার ফসল অকাল বন্যায় ভেসে যাবে কি ? প্রশ্ন গৃহস্তদের। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত মাত্র ৫৪ ভাগ বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরো এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছেন। এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৮৯টি প্রকল্পের জন্য ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এই পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৭৫ কোটি টাকা। অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির গড়িমসির কারণে অনেক স্থানে বাঁধের কাজে গতি মন্থর ও নিম্নমানের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় অনেক ক্ষেত্রে অর্থাভাবে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। তাই কৃষকরা এবারো তাদের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের তথ্য অনুযায়ী মাত্র ৫৪ ভাগ বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অথচ সময় আছে মাত্র ১০ দিন। উপমন্ত্রী বুধবার সুনামগঞ্জের বোরো ধানের উৎসভূমি তাহিরপুরের বিভিন্ন হাওররক্ষা প্রকল্প বাঁধ পরিদর্শন করে বলেন, এ পর্যন্ত ৫৪ ভাগ বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি ও গড়িমসিতে চরম অসন্তুষ প্রকাশ করে তাৎক্ষনিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছেন। তিনি মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে কৃষকরা বোরো ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেন।
এসময় উপমন্ত্রী হুশিয়ারী উচ্ছারণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় কৃষকদের নিয়ে চিন্তায় থাকেন। তাই হাওররক্ষা বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর।
গত বছর সুনামগঞ্জ জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলায় ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমির ১২১ কোটি টাকার ফসল ভেসে যায়। এতে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তার পরও এবার অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে কোমর বেঁধে সুনামগঞ্জের কৃষকরা বোরো ধান ফলিয়েছেন মাঠে মাঠে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো অকাল বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষায় হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে গঠন করা হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কারণ ফেব্রুয়ারির শেষ বা মধ্য মার্চে চেরাপুঞ্জির কাছে অবস্থিত সুনামগঞ্জে অনেক সময় বৃষ্টি ও ঢল নামে। তাই বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
এদিকে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের হাওর পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (প্রশাসন)-এর অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মোহাম্মদ মল্লিক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) এএসএম শহীদুল ইসলাম, পাউবোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মকসুদ চৌধূরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার ৭৪৫ দশমিক ৭৭৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হবে। ২১৮টি ক্লোজার বন্ধ করা হবে। এ জন্য ১ হাজার ৬৫টি পিআইসি গঠন করা হয়। এ পর্যন্ত ১৪৭টি পিআইসির কাজ চলমান। সরেজমিনে দেখা যায় অনেক স্থানে শুধু বাঁধের ওপর মাটি ফেলা হয়েছে। চলছে ছলছাতুরী ও বাঁধের কসমেটিকস সার্জারি। কম্পেকশন ও ড্রেসিং হয়নি। গুরমার হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সুন্দর হলেও বার্ধিত অংশের (টাঙ্গুয়া সংলগ্ন) অবস্থা খারাপ।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য