-->
শিরোনাম

কুমিল্লায় কেমিক্যাল মিশ্রিত শুঁটকিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লায় কেমিক্যাল মিশ্রিত শুঁটকিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে
কুমিল্লার শুঁটকি বাজার

কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার হাট-বাজারজুড়ে শুঁটকি দোকানে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জমজমাট পাইকারি-খুচরা বেচাকেনা। এ অঞ্চলে শুঁটকির বাজারখ্যাত বিভিন্ন এলাকায় নানা কারণে শুঁটকি মাছ আহরণ বন্ধ হয়ে কয়েক হাজার শ্রমিক, মাঝি-মাল্লা ও জেলে বেকার হয়ে মানবেতর দিন যাপন করছে।

 

এ ছাড়া শুঁটকি মাছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রনের ফলে ওইসব শুঁটকি মাছ খেয়ে এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন যেন নীরব দর্শক।

 

জেলার দক্ষিণাঞ্চলে উপজেলাগুলোর একাধিক সূত্র জানায়, জেলার সব উপজেলায় বেশ কয়েকটি শুঁটকির আড়তে চলছে হরেকরকম ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত শুঁটকির বেচাকেনা। এখানে পাইকারি ও খুচরা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জাতের শুঁটকি পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোর একমাত্র উৎস চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ উপক‚লীয় অঞ্চলের নদী, খাল, বিল ও হাটবাজার।

 

প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম, খুলনা ও ফরিদপুর থেকে আসা নানা ধরনের শুঁটকি এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটানো হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল গোষ্ঠীর আত্মসংস্থানের লক্ষ্যে কিছু কিছু পরিবার নদী-নালা, খাল-বিলের মাছ ধরে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটায় এবং অনেকে স্থানীয় বাজারে শুঁটকির দোকানে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দেশীয় শুঁটকির চাইতে আমদানি করা শুঁটকির দাম অনেক বেশি।

 

সূত্রগুলো আরো জানায়, এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষসি ডাকাতিয়া ছাড়া বড় ধরনের কোনো নদী খাল, বিল, হাওর কিংবা শুঁটকির মোকাম নেই। সব ব্যবসায়ী জেলার বাইরে থেকে শুঁটকি আমদানি করে থাকেন। আবার পুঁজির অভাবে অনেকেই এখন আর আগের মতো শুঁটকির আমদানি করতে পারে না। কারণ আগে মাছের দাম কম ছিল, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এবং মহামারি করোনার প্রভাবসহ নানা কারণে বর্তমানে মাছের বাজার অনেক চড়া।

 

তবে আসন্ন রমজান মাসে আরো বাড়বে মাছের দাম। এ খাতে জামানতবিহীন কিংবা সহজ শর্তে ঋণের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এ অঞ্চলের ব্যাংক-বীমাসহ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রহস্যজনক কারণে এগিয়ে আসছে না।

 

জেলার দক্ষিণাঞ্চলের শুঁটকি ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়, জেলার উপজেলাগুলোর প্রধান প্রধান হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, শুকনো পুটি শুঁটকি ৩-৪শ টাকা, সিদল পুটি ৬-৭শ টাকা, চান্দা ৪শ, চন্দন ইলিশ ৪শ, চাঁদপুর ইলিশ ৮শ টাকা, চট্টগ্রাম-নোয়াখালী ইলিশ ৪-৫শ টাকা, লইটা ৬-৮শ টাকা, কাছকি ৩শ টাকা, ছোট চিংড়ি ৪-৫শ টাকা, ছুরি ৭-৮শ টাকা, করাত ১ হাজার ২শ টাকা, চাপিলা ৪-৫শ টাকা, বাইন ৫-৬শ টাকা ও পলি ৩-৪শ টাকাসহ হরেকরকম দেশি-বিদেশি শুঁটকির দাম নানা কারণে উঠানামা করায় ক্রেতারা হিমশিম এবং নানা ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছে।

 

সূত্রটি আরো জানায়, শুঁটকি ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় কেনা মালের ওপর দাম ঠিক রাখতে এবং পুঁজির সাথে লাভসহ বিক্রিতে অনেক বেগ পেতে হয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের। দেশের প্রধান শুঁটকি বাজার চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, ভৈরব, কসবা, বরিশাল, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীসহ চরাঞ্চলের অনেক উপজেলার হাট থেকে বিভিন্ন জাতের শুঁটকি এ অঞ্চলের পাইকারি হাটে আমদানি হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা মৎস্যদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও শুঁটকি ব্যবসার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো তথ্য নেয়া যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version