পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরব্রেট এলাকায় তরমুজ চাষিদের বাসায় ডাকাতির ঘটনার চার দিন পর লুট করে নেয়া মালামালের আংশিক উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাতে ওই চাষিদের বাসায় মালামাল দিয়ে যায় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত নিজাম ফকির নামের এক ব্যক্তি।
এর আগে গত ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল চাষিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
চাষি মো. নুর হোসেন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ গ্রামের মো. নুর হোসেন চন্দ্রদ্বীপের উত্তর চরব্রেট এলাকায় তরমুজ চাষ করেন। তরমুজ খেতের পাশে ছোট ঘরে চাষিদের মালামাল রাখা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই ঘরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল চাষিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪৮ বস্তা সার, ৬ বস্তা চাল, পাম্প মেশিন ও কীটনাশকসহ প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল লুট করে।
২২ ফেব্রুয়ারি চরমিয়াজান চেয়ারম্যান বাজারে ঘাটে বেঁধে রাখা ট্রলারে ইউপি সদস্য মো. আবুল বশার মৃধার সারের সঙ্গে ডাকাতি হওয়া সারের আলামত পাওয়া যায়। তবে ইউপি সদস্য বশার ওই সার তার বলে দাবি করেন।
গোপনে চাষি নুর হোসেনসহ স্থানীয়রা ডাকাতির ঘটনা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ইউপি সদস্য বশার মৃধা চরমিয়াজান এলাকার বশার বয়াতি ও ইয়াকুব পন্ডিত নামের দুই ব্যক্তিকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে ডাকাতির ঘটনা জানাজানি না করার জন্য অনুরোধ করেন।
ডাকাতির মালামাল ফেরত দেয়া হবে বলে জানিয়ে ইউপি সদস্য বলেন, তোমরা যদি বিষয়টা গোপন না রাখো তাহলে আমার মানসম্মান থাকবে না। মেম্বারের এমন কথাবার্তা মুঠোফোনে রেকর্ড করা হয়। ওই রেকর্ড স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের শোনানো হয়।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে চরমিয়াজান এলাকায় কয়েকশ মানুষের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক বসে। সালিশ বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক ট্রলার চালক মো. আল-আমিন সত্য বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় আল-আমিন ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করে বলেন, মেম্বার বশার মৃধা ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। মেম্বারের নির্দেশেই সে ডাকাতির মালামাল পরিবহন করতে যায়।
জানা যায়, ডাকাতির মালামাল মেম্বার বশার মৃধার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে ডাকাতের সঙ্গে এমন চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ডাকাতির ৪৮ বস্তা সারসহ অন্য মালামাল মেম্বারের হেফাজতে রাখ হয়। এ ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরমমিয়াজান গ্রামের নিজাম ফকির, বাবুল সরদার, হাবিব হাওলাদার, দেলোয়ার গাজী, লিটন সরদার, রিয়াজ ও সাবিক হাওলাদার জড়িত বলে জানা যায়। এরা সবাই পলাতক রয়েছে।
সালিশ প্রধান ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক ডাকাতির মালামাল ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। আগামী সাত দিন পর ডাকাতির ঘটনার বিচার হবে বলে জানান।
তরমুজ চাষি নুর হোসেন বলেন, শনিবার রাতে নিজাম ফকির দুটি পানির পাম্প মেশিন, একশ কেজি ডিজেল, একটি সোলার ব্যাটারিসহ ডাকাতির আংশিক মালামাল দিয়ে গেছে। বাকি মালামাল দুই দিনের মধ্যে পৌঁছে দিবে বলে জানায়।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের (চরমিয়াজান) ইউপি সদস্য মো. আবুল বশার মৃধা বলেন, আমি ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। ঘাটে ট্রলারে আমার সার থাকে। ঘটনার দিনও ঘাটে বাঁধা ট্রলারে সার ছিল। কারা যেন ডাকাতির সার আমার ট্রলারে রাখছে।
যখন আমার ট্রলারে সার পাওয়া গেছে তখন আমি বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলি।
এ বিষয়ে বাউফল থানার ওসি মো. আল আমিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য