-->

ভালুকায় ড্রাগন চাষে সাফল্যের প্রত্যাশা কৃষকের

জাহাঙ্গীর আলম, ময়মনসিংহ
ভালুকায় ড্রাগন চাষে সাফল্যের প্রত্যাশা কৃষকের
ভালুকায় ড্রাগন চাষ বেড়েছে

জাহাঙ্গীর আলম, ময়মনসিংহ: বদলেছে যুগ আর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে মানুষ। মানুষের চলার গতিধারায় দিনবদলের এই দিনে গ্রামীণ অর্থনীতি বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের পথ পরিক্রমা। পরিবর্তনশীল এই যুগে কৃষি খাতের নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং আধুনিকায়নে কৃষকরা ঝুঁকছেন আধুনিক কৃষি বিপ্লবের দিকে।

 

অকৃষি জমিও এখন আসছে কৃষির আওতায়, স্বল্প শ্রম ও অল্প পুঁজিতে ফসলের আশাতিত ফলনে কৃষি খাতগুলো গ্রামীণ অর্থনীতিকে করে তুলেছে সমৃদ্ধ।

 

সমৃদ্ধ কৃষি উন্নয়নে ভালুকায় সবজি উৎপাদন এবং পোল্ট্রি ও মালটার সফলতার পর বিদেশি ফল ড্রাগন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদেও সফলতার দ্বার উন্মোচন করায়, প্রান্তিক চাষিদের ভাগ্য বদলের মধ্য দিয়ে অপার সম্ভাবনাময় অর্থনীতির কৃষি খাত, অন্য অর্থ উপার্জনশীল খাতগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে সক্ষমতাও অর্জন করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিজীবিরা।

 

শীত শেষ হয়ে গ্রীষ্মের শুরুতেই এই অঞ্চলে এবার বিপুল পরিমাণ ড্রাগন ফল উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকার কাচিনা ও উথুরা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে দুই বছর আগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত নতুন জাতের বারি ড্রাগন ফল-১ চাষাবাদ শুরু হয়। কৃষিতে অনুপযোগী পরিত্যক্ত উচু লাল দো-আঁশ মাটি এই ফল চাষে অধিক উপযোগী হওয়ায় আবাদের ৩ বছরের মাথায় বিনিয়োগ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখতে শুরু করে উদ্যেক্তরা।

 

কৃষিবিদদের মতে, পুষ্টিগুণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন থাকায়, ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে,আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজম ও চর্বি কমায়, ড্রাগনের বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা, ক্যালসিয়ামে হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত,ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ত্বক মসৃণ, ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।

 

ড্রাগনে এতসব ঔষধি গুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় এর কদর ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে, লাভবান হয়ে উঠছে চাষি, গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাও হয়ে উঠছে সচল। উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের চামিহাদী গ্রামের প্রান্তিক চাষি বিল্লাল হোসেন মাতব্বরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই ভাই মিলে তারা পরিত্যক্ত অকৃষি ২ একর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন, মাটি, আবহাওয়া ড্রাগন চাষের অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো পেয়ে দুই বছরেই তাদের মূল বিনিয়োগ উঠিয়ে এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।

 

এই বছর ড্রাগন বিক্রি করে তাদের ৮ লাখ টাকা আয় হবে। নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় এই ফলের ব্যাপক কদর থাকায় তারা নতুন করে আরো বেশি জমিতে ড্রাগনের আবাদ বাড়াবেন বলে জানান।

 

এছাড়াও ওই এলাকায় তাদের অনুকরণ করে অনেকেই ড্রাগন চাষ করে লাভবান হওয়ার কথা জানিয়ে বিল্লাল মাতব্বর আরো জানান। পশ্চিম ভালুকায় এখনো অনেক অকৃষি অনাবাদি জমি রয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে অকৃষি জমিগুলো ড্রাগন চাষের আওতায় এনে কৃষকদের ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ করলে, গ্রামীণ অর্থনীতি হয়ে উঠবে শক্তিশালি।

 

বেকার জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব দূর হয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে গ্রামীণ জনপদে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এই অর্থবছরে ভালুকায় ৬ হেক্টর জমিতে পরিক্ষামূলক ড্রাগন চাষ হয়, এতে ১২৫ টন ফলন হয়। নতুন অর্থ বছরে ড্রাগন চাষ লক্ষ মাত্রার চেযেও বেশি হবে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

 

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ জেসমিন জাহানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ভালুকার মাটি ফল জাতীয় চাষাবাদের জন্য অধিক উপযোগি থাকায়, এখানকার কৃষকরা নতুন-নতুন ফলের আবাদ করছে, মালটার সফলতার পর এবার তারা ড্রাগন চাষেও সফলতা বয়ে আনছে।

 

এতে বিশাল জনগোষ্ঠির পুষ্টি ঘাটতি কমে আসছে, অর্থনীতিও হয়ে উঠছে শক্তিশালী, কৃষকরা যাতে ড্রাগন ফল আরো বেশি চাষ করতে পারে তার জন্য নতুন-নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে, এর মধ্যদিয়ে ভালুকার ড্রাগন বিদেশেও রপ্তানি করে অর্থ আয় করা সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

 

এছাড়াও দেশের মোট চাষভুক্ত জমির মধ্যে ফলের আওতায় রয়েছে মাত্র ২% জমি অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে মোট ফসলভিত্তিক আয়ের ১০% আসে ফল থেকেই। তাই বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য-পুষ্টির চাহিদা পুরণসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ড্রাগনের গুরুত্ব অপরিসীম।

 

আগামী ঋতুতে এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে ড্রাগন ফ্রুটের উৎপাদন হবে এবং তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারবেন বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

ফল ও ফলজাত দ্রব্যাদি রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ডিএই এর তথ্য মতে, বিদেশে ৫.৭৯৭ টন ফল রপ্তানি করা হয়, যা প্রতি বছর বেড়েই চলছে। ফলে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version