মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট: বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেনের থাপ্পরে কান ফেটে রক্তক্ষরণের অভিযোগ করেছেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান। তবে ধাপ্পর মারার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসক বলছেন, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মিমাংসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানকে। এদিকে এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে দৈনিক ভোরের আকাশের হাতে। তাতে থাপ্পর মেরে গাড়িতে তোলার বিষয়টি স্পষ্ট।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের কাঠালতলা এলাকায় ঘটে এই থাপ্পর মারার ঘটনা।
শুধু থাপ্পর নয়, গালিগালাজ করে জোরপূর্বক গাড়ির পিছনে উঠিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান।
মো. মিজানুর রহমান বলেন, বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে গরুর ফার্মে যাচ্ছিলাম। কাঠালতলা মোড় এলাকায় পৌছালে দ্রুত গতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ব্যাকে (পিছনে) আসে। তখন ইউএনও‘র গাড়ির সাথে আমার মোটরসাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। সাথে সাথে ইউএনও‘র গাড়ি চালক এসে আমাকে গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়িতে না উঠলে, ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে এসে আমাকে থাপ্পর দেন। ধাক্কা দিয়ে গাড়ির পেছনে উঠান এবং গালিগালাজ করেন। গাড়িতে করে কয়েক কিলোমিটার নিয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে ছেড়ে দেন।
ছেড়ে দেওয়ার পর ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ার কথা জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আমার কান ফেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসক আমাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাক, গান গলা বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরামর্শ দেন।
ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক প্রত্যয় দাস বলেন, মো. মিজানুর রহমানের মুখ-কান ফোলা থাকায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কাঠালতলা এলাকায় থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে ভোরের আকাশের হাতে। তাতে দেখা যায়, খুলনা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ফলতিতা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। মাত্র তিন সেকেন্ডের ব্যবধানে গাড়িটি ব্যাকে আসে। তখন পার্শ্ব রাস্তা থেকে উঠে আসা মিজানুর রহমানের মোটরসাইকেলের সাথে ইউএন‘র গাড়িটির সামান্য ঘষা লাগে। প্রথমে গাড়ি চালক নিচে আসেন। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নামেন এবং মো. মিজানুর রহমানকে থাপ্পর দেন। পরে গাড়ির পিছনে উঠিয়ে নিয়ে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রথমে গাড়ি চালক নেমে এসে মিজানুর রহমানকে ধমকায়। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে মিজানুর রহমানকে থাপ্পর দেন।
মো. মিজানুর রহমান ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের দুই বারের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
এদিকে উপজেলার প্রবীন রাজনীতিবিদ ও সাবেক জনপ্রতিনিধিকে মারধরের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইউএনও‘র কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ফকিরহাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খান মোহাম্মাদ আরিফুল হক বলেন, ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন শুধু মো. মিজানুর রহমানকে মারধর করেনি, এর আগেও একাধিক নাগরিক তার হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন। ইউএনও-কে অপসরণ করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।
থাপ্পর দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, তাকে কথা বলার জন্য গাড়িতে ওঠানো হয়। পরিচয় জানার পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, দুই জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য