-->
শিরোনাম

কাইয়ুম নাকি ফরিদ, কার লাশ?

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা
কাইয়ুম নাকি ফরিদ, কার লাশ?

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা: জলদস্যুদের হামলা নিখোঁজ থাকা ৫ জেলের মধ্যে দুইজনের মরহেদ উদ্ধার হয়েছে। এদের মধ্যে এক জেলের মরদেহ দাবি করছে দুটি পরিবার। স্বজনদের এক পক্ষের দাবি এই মরদেহ কাইয়ুম মাঝির। অপর স্বজনদের দাবি, কাইয়ুম নয়; মরদেহটি ফরিদের। এমন জটিলতায় দুটি মরদেহই ফরেনসিক পরিক্ষায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

 

গত ১৭ ফেব্রুয়ারী বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে জলদস্যুদের হামলা শিকার হন ১৭ জেলে। তখন ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর আবদুল হাই নামের এক জেলের মৃত্যু হয়। নিখোঁজ থাকে ৫ জন।

 

নিখোঁজের ১০ দিনের মাথায় ২৭ ফেব্রুয়ারি একজনের এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি আরেকজনের মরদেহ পাওয়া যায়। সাগর থেকে সেই মরদেহ দুটি বুধবার সন্ধ্যায় বরগুনায় নিয়ে আসা হয়। বরগুনায় নিয়ে আসার পরই ময়নাতদন্তে নিলেই দেখা দেয় জটিলতা। সেখানে গিয়ে দুটি মরদেহের মধ্যে একটি মরদেহকে দুই পরিবার তাদের স্বজন বলে দাবি করে। একপরিবার বলছেন লাশটি তাদের স্বজন কাইয়ুমের আরেক পরিবার বলছেন লাশটি ফরিদের। উদ্ধার হওয়া অপর মরদেহটি আবুল কালাম নামের আরেক জেলের। এটির দাবি শুধু কালামের পরিবারেরই।

 

কাইয়ুম মাঝি (৩৫) বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া এলাকার মৃত মানিক জমাদ্দাদের ছেলে। অপর জেলে ফরিদ বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের নলী চরকগাছিয়া এলাকায় মৃত হামিদ খানের ছেলে। দুজনই জলদস্যুর হামলার শিকার জেলে ট্রলারে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকে কাইয়ুম এবং ফরিদ দুইজনেই নিখোঁজ।

 

কাইয়ুমের ভাই নুরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, আমার দুই ভাই কাইয়ুম ও ইয়াসিন মাছ শিকারে গিয়েছিল। এদের মধ্যে ইয়াসিনকে ঘটনার একদিন পর উদ্ধার করা হলেও কাইয়ুম নিখোঁজ ছিলো। ঘটনার দুই দিন পর আমিসহ ৫ জেলের স্বজনরা মিলে ট্রলার নিয়ে সাগরে খুঁজতে থাকি। প্রথম দফায় চারদিন খুঁজে সন্ধান না পেয়ে ফিরে আসি। গত সোমবার সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া একটি জেলে আমাদের জানায় যে কাইয়ুমের লাশ পাওয়া গেছে। খবর শুনে দ্রুত ট্রলার নিয়ে আমরা নিখোঁজ অন্য জেলেদের স্বজনসহ মোট ৫ জন সেখানে গিয়ে আমার ভাই কাইয়ুমের মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর একই ঘটনায় নিখোঁজ অপর জেলে ফরিদের পরিবার দাবি করে এই মরদেহ নাকি ফরিদের।

 

নুরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, তিনদিন আগে যখন আমরা সাগরের ভাসমান অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করি তখন কাইয়ুমের চেহারা বিকৃত হয়নি। আমি চেহারা দেখে নিশ্চিত হই, এই মরদেহ আমার ভাই কাইয়ুমের। পরে সেটি ট্রলারে তুলে বরফ দিয়ে নিয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ আরেক জেলে কালামের মরদেহ ভাসতে দেখে সেটিকে নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় তালতলীর ফকিরহাটে পৌঁছাই।

 

এদিকে ফরিদের মা আনোয়ারা বেগম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘মোর পোলারে মুই চিনি। মটরসাইকেল একসিডেন্ট কইর‌্যা মোর পোলার বাম সাইডের নিচের পাডির তিনডা দাঁত নাই। এই লাশেরও তিনডা দাঁত নাই। মোর পোলায় ছয় ছোট্ট সাইজের আছিল। মোর জোতাও ওর পায়ে লাগদ। মুই পাও দেকছি, শরীল দেকছি এই পোলাডা মোর।’

 

ছয় ও দুই বছরের দুই শিশু কন্যা নিয়ে ছুটে এসেছেন ফরিদের স্ত্রী মিতু। মিতুর দাবি, এই লাশ কাইয়ুমের না, এটা নিশ্চিত ফরিদের লাশ।’ ‘মুই এই দুইডা গুরাগারা লইয়া এহন কুম্মে যামু আমনহেরা মোর এই মাইয়াগো লাশটা বুঝাইয়া দেন’ এমন বিলাপে কান্না করছিলেন মিতু।

 

বরগুনার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সায়লা ফেরদৌস আহসান ভোরের আকাশকে বলেন, ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে আসা দুটি মরদেহ বিকৃত এবং দুই পরিবারই দাবিদার। সে কারণে আমরা ফরেনসকি পরীক্ষার জন্য স্বজনদের ও মরদেহের ডিএনএ স্যাম্পল পাঠাবো। ডিএনএর ফলাফলের ভিত্তিতে মরদেহ সনাক্ত করে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

 

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম ভোরের আকাশকে বলেন, উদ্ধার দুটি মরদেহের একটি আবুল কালামের। এটি নিয়ে জটিলতা নেই। তবে যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে তাই উভয় মরদেহের ফরেনসিক হওয়ার পরই আমরা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version