-->

রূপগঞ্জে মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ লাখো মানুষ

সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
রূপগঞ্জে মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ লাখো মানুষ
আর্বজনা আর মশার লার্ভায় পূর্ণ রূপগঞ্জের ডোবা

সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে রূপগঞ্জ ও রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের প্রায় দশ লাখ মানুষ। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও মশা নিধনে নেই কোনো কার্যকর ভূমিকা। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের পচা পানির কারণে মশার যন্ত্রণা বেশি বলে জানা গেছে। রূপগঞ্জে মশা উপদ্রব অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

 

যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা, ডোবা ও লেকগুলো কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে থাকায় পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ফেলা, শীতলক্ষ্যা নদ-খালের পানিতে অতিমাত্রায় দূষণের কারণে মশার এই উপদ্রব বলে জানা গেছে। ঘরে-বাইরে সবখানে একই অবস্থা।

 

কয়েল, স্প্রে ও মশারি ব্যবহার করেও মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। মশা নিধনে নির্বিকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা বলছেন, সরকারিভাবে মশা নিধনে কোনো বরাদ্দ না থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না।

 

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রূপগঞ্জের ৭ লাখ বাসিন্দা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি রাজধানী পূর্বাঞ্চলের ডেমরা, নাসিরাবাদ, বেরাইদসহ আশপাশের আরো ৩ লাখ মানুষ মশার জ¦ালায় এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

 

কথা হয় নগরপাড়া এলাকার নুরুল হক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত-দিন সমানে মশার জ¦ালায় অতিষ্ঠ আমরা। এরশাদের আমলে মাঝেমাধ্যে হেলিকপ্টারে করে মশার ওষুধ ছিটানো হতো, তখন ভালোই ছিলাম।

 

বাগবাড়ি এলাকায় থাকেন সুজন আহম্মেদ লিটন। তার স্ত্রী মুসরাত সুলতানা জানান, দিনেদুপুরে মশারি খাটিয়ে রাখতে হয়। তাতেও রেহাই পাওয়া কষ্ট। আর রাত হলে তো কথাই নেই। মশার ভনভন শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়।

 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েল জ্বালিয়ে, ধূপ পুড়িয়ে, অ্যারোসল স্প্রে করে কিংবা মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। মশার যন্ত্রণায় স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পাঠে বিঘ্ন ঘটছে। অথচ এ বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার রূপগঞ্জের জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগ। মশার জন্মস্থান নোংরা ড্রেন ও জলাশয়গুলোও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মশার লার্ভা মারার জন্য লার্ভিসাইডসহ অন্য কোনো ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে না।

 

বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের তীরবর্তী লোকজন জানান, আগে আমাদের এলাকায় মশা ছিল না। এই অভিশপ্ত পচা পানি আসার পর থেকে মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের পচা পানি মশার বংশ বৃদ্ধির কারণ।

 

তাছাড়া নোংরা ড্রেন ও জলাশয় তো রয়েছেই। রূপগঞ্জের নগরপাড়া, খামারপাড়া, কামসাইর, ইছাখালী, বড়ালু, পাড়াগাঁও, পূর্বগ্রাম, গঙ্গানগর, রূপসী, মুড়াপাড়া, বানিয়াদি, নিমেরটেক, বরুনা, নাওড়া, মাঝিনা, হরিণা, বাঘবাড়ী, দেইলপাড়া, নয়ামাটি, দক্ষিণপাড়া, কেওডালাসহ প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

 

বালুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ গোপাল সরকার বলেন, ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর সময়ও মশা কামড়ায়। মশার জ্বালায় ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো লেখাপড়াও করতে পারছে না। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুম আহম্মেদ বলেন, মশার যন্ত্রণার কথা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। তবে পচা পানির কারণে মশার উৎপাতটা বেশি। সরকারিভাবে বরাদ্দ পেলে হয়তো ফগার মেশিনের সাহায্যে মশার ওষুধ ছিটিয়ে ব্যবস্থা নেয়া যেত।

 

গঙ্গানগর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, খাইতে বইলেও মশার কারণে শান্তি পাই না। খাবারের লগে (সাথে) মশাও মুখে ঢুইক্ক্যা যায়। এর থেইক্ক্যা কি কোনো নিস্তার পামু না?

 

নগরপাড়া বাজারের চায়ের দোকানি রিগেল মিয়া জানান, মশার উৎপাতের কারণে দোকানে লোকজন চা খেতে আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি এখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ধূপের ধোঁয়া আর কয়েল জ্বালিয়ে দেন।

 

কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, মশার উপদ্রব রয়েছে, এটা সত্যি কথা। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা না নিলে তো আমরা কিছু করতে পারছি না। তবুও চেষ্টা করছি।

 

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) বলেন, রূপগঞ্জের আনাচে-কানাচে ব্যাপকভাবে মৎস্য চাষ হচ্ছে। ফসল ফলানো হচ্ছে। মশার ওষুধ ছিটালে মৎস্য খামার ও ফসলের ক্ষতি হবে। এসব কথা ভেবেই মশার ওষুধ ছেটানো হয় না।

 

তিনি বলেন, পৌরসভাগুলোতে এ খাতে বরাদ্দ অনুযায়ী মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জনগণ এর সুফলও পাচ্ছে। তবে চেষ্টা চলছে বিকল্পভাবে মশা কীভাবে নিধন করা যায়। রূপগঞ্জবাসীর শান্তির জন্য আমি সব সময় প্রস্তুত আছি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version