-->

সিলেট-সুনামগঞ্জের সংযোগস্থলে সোনাই নদীতে নির্মিত হচ্ছে সেতু

খালেদ আহমদ, সিলেট
সিলেট-সুনামগঞ্জের সংযোগস্থলে সোনাই নদীতে নির্মিত হচ্ছে সেতু
ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সংযোগস্থল সোনাই নদীতে নির্মাণ হচ্ছে সেতু

খালেদ আহমদ, সিলেট: একটি সেতুর জন্য পাঁচ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে অপেক্ষা করতে হলো দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী। তিন উপজেলা সংযুক্ত ও সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে এই একটিমাত্র সেতুতে।

 

স্বাধীনতার ৫২ বছর পর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় একদিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ অন্যপাশে সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারা উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষাধিক মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। ফলে এলাকায় আনন্দ উচ্ছাস দেখা দিয়েছে।

 

বর্ষায় নৌকা ও শুকনো মৌসুমে বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হলেও ভোগান্তির সীমা ছিল না তিন উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নবাসীর। অবশেষে তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। ছনবাড়ি বাজার সংলগ্ন ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সংযোগস্থল সোনাই নদীতে নির্মাণ হচ্ছে পাকা সেতু। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক শুক্রবার তাঁর নির্বাচনী এলাকার এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিস্থাপন করেন।

 

সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জের ছাতকের সাথে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

 

ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ দুই উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য আরো প্রসারিত হবে। ঘুচবে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চরম দুর্ভোগ। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীর দাবি ছিল সোনালি চেলা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের কিন্তু নির্মিত হয়নি। অবশেষে নির্মাণকাজ শুরু করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকার।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হবে। ৬০ দশমিক ৬ মিটার (১৯৭ ফুট) দীর্ঘ ও সাত মিটার (২১ ফুট) প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৫ টাকা। কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস মমিনুল হক এর নির্মাতা। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ৩১ জুলাই প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা।

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ছাতকের উপজেলা প্রকৌশলী আফছর আহমদ জানান, কিছু জটিলতার কারণে হয়তো প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে বিলম্ব হবে।

 

তিনি জানান, ইতোমধ্যে পাইলিংসহ সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেতুর দুই প্রান্তের পাইলিং শেষ হলেও মধ্যখানের পাইলিং নিয়ে তারা জটিলতায় আছেন। পাইলিং ৪০ মিটার যাবার কথা থাকলেও নিচে পাথরের কারণে ৩৬ মিটারে গিয়ে সেটি আটকে আছে। অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

 

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ওই এলাকার নদীতে আগেভাগে পাহাড়ি পানি নেমে আসে। যে কারণে অনেক সময় এক মৌসুমে কাজ শেষ করা যায় না।

 

প্রকল্প ম্যানেজার কামাল জানান, চারটি কলাম ও তিনটি স্প্যানে ৬০ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে বালুর বাঁধ দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

 

ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের (ছাতক-দোয়ারা) সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, সোনাই নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়ন, দোয়ারাবাজারের নরসিংপুর ও বাংলা বাজার ইউনিয়ন এবং কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ও পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ সুফল পাবেন।

 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, সেতুটির কাজ সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারার সাথে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে। অবহেলিত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের দীর্ঘ প্রত্যাশিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।

 

তিনি জানান, বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলি মণিপুরি রাসলীলা অনুষ্ঠানে ছনবাড়ি বাজার এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সোনাই নদীতে সেতু নির্মাণের। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। ইতোপূর্বে সোনাই নদীতে রাবার ড্যামের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি চাষাবাদের আওতায় এসে এই অঞ্চলের কৃষিতে যেমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, সেতুটি নির্মাণের ফলে এলাকাবাসী এর সুফল ভোগ করবেন।

 

কোম্পানীগঞ্জের ছনবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রফিক জানান, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা নদীতে বাঁশ-কাঠের সাঁকো তৈরির আগে সীমাহীন কষ্ট করে স্কুলে যাতায়াত করে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের সময় অনেক শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারত না। সোনাই নদীর সেতুটি তাদের দুর্ভোগ লাঘব করে স্বাচ্ছন্দ্যে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথ সুগম করবে।

 

গাংপার নোয়াকোট গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী নুরুজ্জামান জামাল বলেন, সোনাই নদীতে সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলে যোগাযোগ সহজ ও পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী হবে।

 

ছাতক-দোয়ারার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সহজেই কৃষিপণ্য সিলেটে বাজারজাত করা যাবে। সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় মুহিবুর রহমান এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version