ধীরে ধীরে ঐতিহ্য হারাতে বসছে খুলনার গামছা শিল্প। সুতা, রং, ময়দা, তুঁতেসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি, কারিগরদের পেশা পরিবর্তন এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে বিবিধ সমস্যা এ শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
এক সময় বাংলাদেশের গামছাপল্লি হিসেবে খ্যাত খুলনার ফুলতলায় প্রায় দেড় হাজার পরিবার গামছাশিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও এখন মাত্র ১৩০ থেকে ১৪০টি পরিবার এ পেশায় টিকে আছে। উৎপাদনও হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, এক সময় এ অঞ্চলের গামছা স্থানীয়দের চাহিদা পূরণ হয়ে বাকিটা চলে যেত দেশের অন্যত্র। এমনকি বিদেশেও ছিল এর ব্যাপক কদর। তখন ছিল এ অঞ্চলের গামছাশিল্পের কারিগরদের সোনালি দিন। সে সময় অন্তত ১ থেকে দেড় হাজার পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত ছিল। উন্নত যন্ত্রপাতি, মজবুত রং ও টেকসই হওয়ার কারণে এখানকার গামছার কদর ছিল দেশব্যাপী।
সময়ের বিবর্তনে এ শিল্পে ভাটা পড়ে। সুতা, রং, ময়দা, তুঁতেসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি, দক্ষ কারিগরের অভাব ও নজরকাড়া বিভিন্ন ধরনের আমদানিকৃত পোশাকের ভিড়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গামছার কদর এ অঞ্চলে ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। বর্তমানে ফুলতলায় মাত্র ১৩০ থেকে ১৪০টি পরিবার এ পেশা আগলে রেখেছে।
বাকিরা বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ফুলতলার আলকা ও দামোদর গ্রামের বাসিন্দা। এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিমত, বর্তমানে এ পেশা যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে তাতে গামছাশিল্পের ওপর নির্ভর করে সংসার চালানো কষ্টকর।
তারা আরো বলেন, এক সময় এ শিল্পের ওপরই নির্ভর করত আমাদের জীবন-জীবিকা। বর্তমানে আয় কম হওয়াতে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা গ্রহণ করেছে।
ফুলতলা গামছা তৈরির কারিগর ৬২ বছর বয়সি আবেজান বেগমের কাছে তাঁতশিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অঞ্চলে তাঁতশিল্পের বর্তমান অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ। এ শিল্পের উপকরণের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে করে সারা দিনে তৈরি গামছার যে মূল্য দাঁড়ায় তা দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।
তিনি আরো জানান, আমার স্বামী এ পেশার সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ছিল। তাই আজও স্বামীর স্মৃতিকে আগলে রাখার জন্য এ পেশার সাথে জড়িয়ে আছি।
দামোদর গ্রামের কারিগর আব্দুল ওহাব জানান, এক দিনে মাত্র পাঁচটি গামছা তৈরি করা গেলেও গামছার বাজার দর হিসেব অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত লোকসানের ঘানি টানতে হয়।
এ অঞ্চলের বর্তমানে টিকে থাকা কারিগর হাসমত বিশ্বাস, রহমত বিশ্বাস, আছর আলী বিশ্বাস, আবেদা বেগম, বাবর আলী, হোসেন বিশ্বাস, হাফিজুর রহমান, নাহার, মান্নানসহ আরো অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক অপার নিদর্শন গামছা শিল্পকে খুলনাঞ্চলে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে তাঁতশিল্পের উপকরণের দাম কমানো এবং সহজশর্তে এ শিল্পে ঋণ প্রদান করা অতীব জরুরি বলে তারা মনে করেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য